ডিজিটাল মার্কেটিং ইন্ডাস্ট্রিতে একটি কথা আছে - "কন্টেন্টই হলো রাজা।" এর মানে হলো যে, আপনার যদি একটি ডিজিটাল রাষ্ট্র থাকে, তাহলে আপনার কন্টেন্ট সেই রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তা। তাই আপনি যদি ভালোভাবে এসইও ফ্রেন্ডলি করে কন্টেন্ট তথা আর্টিকেল রাইটিং করতে পারেন, তাহলে আপনাকে আটকানোর সামর্থ্য কারো নেই। এছাড়া আপনার ওয়েবসাইট ডিজাইন, ব্যাকলিংক, পেজ স্পিড - এগুলোকে আপনার রাজ্যের প্রজা হিসেবে বিবেচনা করা যায়। আপনার রাজা যদি ঠিক না থাকে, তাহলে কিন্তু আপনার রাষ্ট্র ঠিকঠাক মতো চলবে না।
তথ্য প্রযুক্তির যুগে প্রায় সব ব্যবসায় অনলাইন ভিত্তিক। ডিজিটাল মার্কেটিং জগৎ আজ সম্পূর্ণরূপে কন্টেন্ট এবং আর্টিকেল লেখার উপর নির্ভর করে আছে। ব্লগাররা ব্লগ তথা আর্টিকেল লিখে ইনকাম জেনারেট করছে। অনলাইন বাজারে মানসম্পন্ন আর্টিকেল লেখকের চাহিদা দিন দিন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আর্টিকেল রাইটিং কি, আর্টিকেল লেখার জন্যে সঠিক নিয়ম কি কি তা আমরা অনেকেই জানি না। তাই আমি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ব্লগ পোস্টের জন্য কন্টেন্ট তথা আর্টিকেলের যাবতীয় বিষয়বস্তু সম্পর্কে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করবো। চলুন তাহলে শুরু করা যাক -
কন্টেন্ট রাইটিং এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো - আর্টিকেল রাইটিং। কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে জানার জন্য আমরা কোন বই, ম্যাগাজিন, পত্রিকা অথবা অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে, যে লেখা বা টেক্সট পড়ি, ভিডিও, অডিও, ইমেইজ দেখি সেগুলোই হচ্ছে কনটেন্ট বা আর্টিকেল।
কন্টেন্ট অনলাইন বা অফলাইন দুই ধরনের হতে পারে। অনলাইন কন্টেন্টগুলোকে ডিজিটাল কন্টেন্টও বলা হয়। ডিজিটাল কন্টেন্ট গুলোর মধ্যে রয়েছে -
টেক্সট কন্টেন্ট (আর্টিকেল),
ভিডিও কন্টেন্ট,
অডিও কন্টেন্ট এবং
ছবি/ ইমেজ ইত্যাদি।
আর কোনো নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে সাজিয়ে গুছিয়ে টেক্সট আকারে তথ্য বহুল কোনো কনটেন্ট লেখার যাবতীয় কার্যক্রমকেই বলা হয় আর্টিকেল রাইটিং। এগুলো সাধারণত সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, অনলাইন নিউজপোর্টাল অথবা ব্লগে প্রকাশের উদ্দেশ্যে লেখা হয়।
আর্টিকেল মূলত ব্যাপক সংখ্যক অডিয়েন্সের জন্য লেখা হয়ে থাকে। এখানে পাঠকদের মনোযোগ, আকর্ষণ শেষ অবধি ধরে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই কারণেই এগুলো সাধারণত একটি আকর্ষণীয় বা বিনোদনমূলক পদ্ধতিতে লিখতে হয়। এটি ফরমাল বা ইনফরমাল উভয়ই হতে পারে। আর্টিকেলের মধ্যে বিভিন্ন মতামত এবং চিন্তা, সেইসাথে তথ্য যুক্ত থাকে।
ব্লগ হচ্ছে কনটেন্ট মার্কেটিং স্ট্রাটেজির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে পাঠকদের সাহায্য করে যা, পাঠকরা সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে খুঁজে পায়।
কন্টেন্ট মার্কেটিং এর অনেকগুলো ধাপের মধ্যে ব্লগিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় সব ক্ষেত্রেই, ব্যবহারকারীরা প্রথমে ব্লগের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে অনলাইন কনটেন্ট থেকে সাহায্য নিয়ে থাকে। এর মাধ্যমে এটি আপনার ওয়েবসাইট এর ট্র্যাফিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
আপনি যখন আপনার ব্লগের জন্য কনটেন্ট লিখবেন তখন আপনাকে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বিবেচণায় রাখতে হবে, যাতে আপনার আর্টিকেলটা অন্য সবার থেকে আলাদা হয়। নিচে উপাদানগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো -
আর্টিকেল রাইটিং এর জন্য নির্দিষ্ট নিশ সিলেকশন
সহজ ভাষায়, আপনি যে স্পেসিফিক বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন, তাকেই নিশ বলা হয়। আরো সহজ ভাষায় বললে, আপনি যে নির্দিষ্ট বিষয়টি সিলেক্ট করেছেন ব্লগ করার জন্য তাকে একটি নিশ বলা হয়। এটি হতে পারে অডিয়েন্স রিলেটেড যেকোনো বিষয় নিয়ে। যেমনঃ এডুকেশন, হেলথ, ট্র্যাভেল, ইলেকট্রনিক্স,স্পোর্টস, ফ্যাশন, টেকনোলজি ।
নিশ ২ ভাবে সিলেক্ট করতে পারেন। যেমন - সিঙ্গেল নিশ ও মাল্টি-নিশ। সিঙ্গেল নিশ হচ্ছে যেকোনো একটি স্পেসিফিক বিষয় নিয়ে কাজ করাকে বুঝায়। যেমন - ফুটবল (এটি স্পোর্টস ক্যাটাগরির মধ্যে স্পেসিফিক বিষয়)। অপরদিকে মাল্টি-নিশ হলো এমন বিষয় যা আপনার ঐ বিষয়ের সকল ক্যাটাগরিকে কভার করবে। যেমন - স্পোর্টস (এর মধ্যে ক্রিকেট, ফুটবল, টেনিস, হকি ইত্যাদি সহ আরো অনেক স্পোর্টস নিয়ে ব্লগ থাকতে পারে)।
আপনি যদি ব্লগিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ার কথা ভেবে থাকেন, তাহলে আপনাকে সর্বপ্রথম একটি নিশ সিলেক্ট করতে হবে। কারণ ব্লগিংয়ের প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল নিশ নির্বাচন করা। তাই প্রথমেই নিশ সিলেকশন নিয়ে প্ল্যান করতে হবে।
আপনি যদি এই নিশ সিলেকশন সঠিকভাবে করতে পারেন, তাহলে ব্লগিং জার্নিতে আপনার ২৫% কাজ শেষ হয়ে যাবে। কারণ, সঠিক নিশ বা প্রোডাক্ট কিংবা পণ্য সিলেক্ট করতে পারলে ব্লগিং নিয়ে আপনার যে স্বপ্ন তা সাকসেস হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ বেড়ে যাবে।
তাই, ব্লগিং কিংবা বিজনেসের ক্ষেত্রে যেকোনো জায়গায় নিশ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আর্টিকেল রাইটিং এর জন্য নির্দিষ্ট কিওয়ার্ড রিসার্চ
কনটেন্ট রাইটিং এর জন্য প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ স্টেপ হচ্ছে কিওয়ার্ড রিসার্চ। আপনার ইউজাররা কি লিখে সার্চ করছে, আপনি যদি সেটা নাই জানেন তাহলে আপনি যা নিয়েই লিখেন না কেনো, সেটা আপনার বা আপনার ইউজারদের জন্য কোনো কাজে আসবে না। কোনো কিছু নিয়ে লেখার আগে আপনাকে এটা দেখে নিতে হবে যে, আপনি যে বিষয়ের উপর লিখছেন, এই বিষয়ের জন্য আপনার ইউজাররা কি কিওয়ার্ড লিখে সার্চ করে। কেননা আপনার ইউজাররা যা লিখে সার্চ করে ঐ বিষয়ের জন্য তা যদি আপনি বুঝতে বা ধরতে না পারেন তাহলে আপনার লেখার কোনো দাম থাকবে না। আর এই লেখাও আপনার ইউজারদের কোনো উপকারে আসবে না। তাই সবার আগে কিওয়ার্ড রিসার্চ করা অন্তত জরুরি। কিওয়ার্ড রিসার্চ হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজ এর প্রধান সাহায্যকারী যা, ইউজারদের সঠিক ইনফরমেশন পেতে সহায়তা করে থাকে। চলুন জেনে নেই কি কি উপায়ে সহজে কিওয়ার্ড রিসার্চ করা যায় -
স্টেপ-০১
Keyword Surfer - আপনি ক্রম (Chrome) বা ফায়ারফক্স (Firefox) এর মাধ্যমে কিওয়ার্ড সার্ফার এক্সটেনশনটি অ্যাড করে নিবেন কীওয়ার্ড রিসার্চ এর জন্য। এই এক্সটেনশনটি আপনার কিওয়ার্ড রিসার্চ প্রক্রিয়াকে করে দিবে সহজ থেকে সহজতর।
স্টেপ-০২
এক্সটেনশনটি ক্লিক করে “select location” এ যেয়ে আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কিওয়ার্ডের জন্য আপনার পছন্দ মতন দেশ সিলেক্ট করে দিতে পারবেন। কেননা একেক দেশের জন্য, দেশের মানুষের চাহিদার উপর বিবেচনা করে কিওয়ার্ড ভিন্ন রকমের হতে পারে।
স্টেপ-০৩
গুগল সার্চ বারে আপনি যখন আপনার কাঙ্ক্ষিত কিওয়ার্ড দিবেন সাথে সাথে এই এক্সটেনশনটি আপনাকে ঐ কিওয়ার্ড এর সার্চ ভলিউম লোকেশন অনুযায়ী দেখাবে।
স্টেপ-০৪
এই এক্সটেনশনটি ব্যবহারের ফলে আপনি আপনার কিওয়ার্ডের সার্চ ভলিউমের পাশাপাশি ঐ কিওয়ার্ডের রিলেটেড কিছু কিওয়ার্ড পেয়ে যাবেন, যা আপনার কিওয়ার্ড রিসার্চ প্রক্রিয়াকে আরো সহজ করে তুলবে।
চোখ ধাঁধানো হেডলাইন
আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে আপনার ভিজিটররা যাতে আপনার আর্টিকেলের হেডলাইন দেখে ক্লিক করে। Copyblogger এর রিপোর্ট অনুসারে, ১০ জনের মধ্যে ৮ জন একটি হেডলাইন দেখেই ক্লিক করে থাকে। তাই, প্রতিটি আর্টিকেলর জন্য একটি আকর্ষণীয় বা চোখ ধাঁধানো হেডলাইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে চলুন আকর্ষণীয় হেডলাইন তৈরি করার জন্য কি কি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে তাও জেনে নেই -
আপনার আর্টিকেলের জন্য কমপক্ষে ৫ টি হেডলাইন লিখুন এবং তারপরে যাচাই-বাছাই করে আপনার ব্লগ পোস্টের জন্য সেরা হেডলাইনটি বেছে নিন। প্রফেশনাল ব্লগাররা সাধারণত এমনটাই করে থাকেন। কেননা আপনার ব্লগের আর্টিকেলের হেডলাইন যত আকর্ষণীয় হবে, ভিজিটররা আপনার আর্টিকেলে তত বেশি ক্লিক করবে অথবা আর্টিকেলটি পড়ার জন্য তাদের আগ্রহ বাড়বে।
আপনি যে হেডলাইন বাছাই করুন না কেন, এটি যেন আপনার পোস্টটিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারে, সে বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে। না হলে আপনার কন্টেন্টে ভালো ক্লিক পড়বে না। অর্থাৎ আপনি আশানুরূপ ভিজিটর পাবেন না। এছাড়া আপনার হেডলাইনের লেখাগুলো যাতে নির্ভুল থাকে, সেদিকেও নজর রাখতে হবে।
টাইটেলটি কখনই বেশি লম্বা করবেন না, তাহলে পাঠক আপনার হেডলাইন থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। তাই, টাইটেল যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত এবং রিলেভেন্ট রাখার চেষ্টা করুন। শিরোনামটি ৬ থেকে ৯ শব্দের মধ্যে হওয়া উচিত। অথবা ৩০ থেকে ৬০ ক্যারেক্টারের মধ্যে হলে ভালো হয়। টাইটেলটি যদি আকর্ষণীয় হয় তাহলে পাঠকদের এটেনশন পাওয়া খুব সহজ হয়।
How, Who, What, When, Why, When এই সকল প্রশ্নবোধক শব্দগুলো ভিজিটরদের ক্লিক ও আর্টিকেল পড়ার ইন্টারেস্ট বাড়িয়ে দেয়। তাই কনটেন্ট এর হেডলাইনে এই সকল ওয়ার্ড গুলো ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। আপনার টার্গেট এমন হওয়া উচিত যে, ভিজিটর যাতে আপনার টাইটেলটি দেখার সাথে সাথে ক্লিক করার ইন্টারেস্ট পায়।
কন্টেন্টের সাথে আপনার হেডলাইনের মিল থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টাইটেল যদি অপ্রাসঙ্গিক অর্থাৎ কন্টেন্টের সাথে ম্যাচ না হয়, তবে আপনার পোস্টে ক্লিক পড়ার সম্ভাবনাও কমে যাবে।
পাওয়ারফুল শব্দগুলো ভিজিটরের সাইকোলজিক্যাল ও ইমোশনালভাবে সংযুক্ত করে রাখে।টাইটেলের মধ্যে পাওয়ার শব্দগুলো থাকলে ভিজিটরদের আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। কিছু পাওয়ার শব্দ হচ্ছে - Awesome, Incredible, Great, Instantly, Free, New ইত্যাদি।
আপনি যদি আপনার টাইটেলে নাম্বার ব্যবহার করতে জানেন, তবে আপনার টাইটেল সম্পর্কে পাঠকের আকর্ষণ অনেক গুণ বেড়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ: Top 10 football players of all time.
আর্টিকেলের জন্য ভূমিকা
আমরা নজরকাড়া টাইটেল সম্পর্কে তো জানলাম, এখন চলুন জেনে নেই কি করে ভালো একটা ভূমিকা লেখা যায়? ভূমিকা হচ্ছে ভিজিটরদের ধরে রাখা, আর্টিকেল পড়ার আগ্রহ তৈরি করা ও শেষ পর্যন্ত পড়তে বাধ্য করা। চলুন জেনে নেই কীভাবে ইন্ট্রোডাকশন অর্থাৎ ভূমিকা লিখবেন!
আগেই বলেছি রিলিভেন্ট প্রশ্ন আর্টিকেলে থাকলে আপনার ভিজিটর কৌতুহলবসতই ঐ আর্টিকেলে আটকে যায়। কেননা ভিজিটররা সব সময় ইনফরমেশন জানতে চায়। এখন আপনার পোস্টের ভূমিকা যদি ইনফরমেশন দিয়ে শুরু করেন, তাহলে ভিজিটররা আপনার পুরো কন্টেন্ট পড়তে আগ্রহী হবে।
ভূমিকা আর্টিকেলের বিষয়ের সাথে যতটা সম্ভব রিলেভেন্ট হওয়া উচিত, তাই এটি যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত রাখা যায়, ততই ভালো। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি ১০০০ শব্দের আর্টিকেল লিখছেন, তাহলে ১০০ শব্দের ভূমিকাই যথেষ্ট। তবে, আপনার আর্টিকেল যতই দীর্ঘ হোক না কেন, আপনার ভূমিকা কখনই ২০০ শব্দের বেশি হওয়া উচিত নয়।
পাঠকের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে বিভিন্ন উদ্ধৃতি আপনার কন্টেন্টে ব্যবহার করুন। এটি আপনার কনটেন্টে ভ্যালু যোগ করবে এবং আপনার পাঠককে কন্টেন্টটি পড়তে কৌতূহলী করে তুলবে।
পরিসংখ্যান ও তথ্য অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমেও কিন্তু পাঠকের আস্থা অর্জন করা যায়। তাই আপনার কনটেন্ট এর ভূমিকায় পরিসংখ্যান ও তথ্য যদি যথাযুক্ত পান তাহলে যোগ করুন। সাথে যে সোর্স থেকে পরিসংখ্যান ও তথ্য পেয়েছেন ঐটাও উল্লেখ করে দিন। এতে করে আপনার ও আপনার লেখার উপর ভিজিটরদের আস্থা বাড়বে।
আপনার ব্লগ পোস্টে কি মূল্যবান তথ্য আছে? এটা কি পাঠককে পিন পয়েন্ট এ কানেক্ট করে? আপনার ব্লগ পোস্ট পাঠকদের জন্য কি পড়ার যোগ্য? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর আপনার পোস্টের ভূমিকায় থাকলে, পাঠক আপনার পোস্টটি পড়ার ইন্টারেস্ট খুঁজে পাবে।
কনটেন্ট এর বডি
এখন কনটেন্টের আসল পয়েন্টে আসা যাক, আর সেটা হলো কন্টেন্ট নিজেই। আপনি কনটেন্ট এর নজরকাড়া টাইটেল ও আকর্ষণীয় ইন্ট্রো লিখতে যতটুকু প্রচেষ্টার দরকার ছিল তা করেছেন বা জেনেছেন যাতে পাঠক আপনার লিখার পরবর্তী অংশ পড়তে আগ্রহী থাকে। এবার আপনাকে কন্টেন্টের বডি অর্থাৎ ভেতরের অংশ কেমন হবে সেদিকে ফোকাস দেওয়া উচিত। চলুন তাহলে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। আকর্ষণীয় কনটেন্ট বডিতে কি কি থাকতে হবে তার পয়েন্ট গুলা নিচে তুলে ধরছি -
১. অনুচ্ছেদে কম কম বাক্য ব্যবহার করুন
আপনি যখন একটি অনুচ্ছেদ লিখবেন তখন তা যেন ৩/৪ বাক্যের মধ্যে হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখাটা বেশ জরুরি। খুব বেশি বড় অনুচ্ছেদ পাঠককে কন্টটেন্টটি পড়তে অনাগ্রহী করে তুলে। তাই যতটা সম্ভব অনুচ্ছেদটি ছোট ও তথ্যবহুল ও আকর্ষণীয় করে তোলা যায় ততই আপনার জন্য ভালো।
২. সাবহেডিং ব্যবহার করুন
সাব-হেডিং হচ্ছে কনটেন্ট এর মূল স্তম্ভ। সাবহেডিং ব্যবহার করার ফলে পাঠকদের কাছে আপনার লিখাকে অনেক বেশি আকর্ষণীয় করে তুলে। যাতে পাঠক কনটেন্ট পড়তে আগ্রহ না হারায়। সাব-হেডিং কনটেন্টকে পড়তে সহজ ও সাবলীল করে তুলে।
৩. বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার
বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করে আপনার কনটেন্টে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যুক্ত করুন। অপ্রয়োজনীয় শব্দগুলি বাদ দিয়ে, বুলেট পয়েন্টগুলি ব্যবহার করা হলে তা আপনার কনটেন্টকে আরও পাঠযোগ্য করে তোলে। অপ্রয়োজনীয় কথা লিখে কনটেন্ট বড় না করে, প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো বুলেট পয়েন্ট আকারে ফুটিয়ে তুলেন। যা আপনার কনটেন্টকে দেখতে আরো ইন্টারেস্টিং করে তুলবে।
৪. ইমেজ/চার্ট/ইনফোগ্রাফিক ব্যবহার
কথায় আছে, “ছবি হাজারো কথা বলে।” আপনি আপনার ব্লগ পোস্ট এ রিলেভেন্ট ছবি/চার্ট/ ইনফোগ্রাফিক ব্যবহার করার মাধ্যমে পাঠকদের মনে ঐ পোস্ট সম্পর্কে একটি প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলতে পারেন। আপনার পোস্টকে রাঙ্গিয়ে তুলতে ছবি, ভিডিও, চার্ট এগুলোর বিকল্প কিছু নেই। লেখার সাথে রিলেটেড ছবি, ভিডিও পাঠকদের লেখাটি পরতে কৌতূহলী করে তুলবে এবং এতে পাঠক লেখাটি পরতেও বিরক্তবোধ করবেন না।
৫. অনেক লিঙ্ক ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন
এখানে লিঙ্ক বলতে এক্সটার্নাল ও ইন্টারনাল লিংককে বুঝেয়েছি। এক্সটার্নাল লিঙ্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। রিলেভেন্ট সাইট গুলাতে এক্সটার্নাল লিংক দিবেন তবে ২/১ টা, তার বেশি না।
ইন্টারনাল-লিঙ্কিং হলে, অনুগ্রহ করে রিলেভেন্ট পেজ/পোস্টে লিংক করুন। যতগুলা আপনি করতে চান করতে পারেন কিন্তু, রিলেভেন্ট পেজ ও পোস্ট এ করতে হবে। যাতে আপনার ঐ লিংকের সাথে কনটেন্টের মিল থাকে।
অনুপ্রেরণামূলক উপসংহার
একটি আকর্ষণীয় টাইটেল, ভালো ইন্ট্রো এবং আকর্ষণীয় কনটেন্ট বডির পরে, একটি অনুপ্রেরণামূলক উপসংহার তৈরি করুন। এখন চলুন দেখে নেই কীভাবে একটা ভালো উপসংহার লিখতে হয় -
১. মূল পয়েন্টগুলি সংক্ষিপ্ত করুন
আপনি আপনার কন্টেন্টের আসল পয়েন্টগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে উপসংহারে তুলে ধরুন। যাতে পাঠকদের আসল মেসেজ পেতে সহজ হয়। মনে রাখবেন উপসংহার আপনার কনটেন্টের সারমর্ম। তাই যতটা সম্ভব ছোট রাখার চেষ্টা করবেন।
২. প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন
উপসংহারে একটি প্রশ্ন রাখতে পারেন যাতে পাঠকরা আপনার লেখাটি পড়ে তাদের মতামত জানাতে পারে। এতে আপনার কমেন্ট সেকশনে এনগেজমেন্ট বাড়বে। তবে ১ টির বেশি প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকুন।
৩. অনুপ্রেরণামূলক উক্তি
লেখা পুরোপুরি শেষ করার আগে একটি অনুপ্রেরণামূলক উক্তি জুড়ে দিন, যাতে পাঠকের মনে আপনার এই লিখাটি দীর্ঘ ও পজিটিভ প্রভাব ফেলে। এতে করে ভিজিটররা আপনার কনটেন্ট ও পরবর্তী লিখা গুলো পড়তে আগ্রহী পাবে।
ব্লগ লেখার বা লিখে পাবলিশ করার অনেকগুলো প্লাটফর্ম আছে, তার মধ্য সেরা কয়েকটি প্লাটফর্ম নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো -
www.blogger.com
ব্লগার ডট কম ব্লগ প্রকাশ করার জন্য অন্যতম জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। যেখানে এককভাবে বা যৌথভাবে আপনি ক্রমানুসারে ব্লগ প্রকাশ করতে পারবেন। ব্লগার ডট কম তৈরী হয়েছে ২০০৩ সালে । সাধারণত ব্লগ গুলো গুগল এ হোষ্ট করা থাকে । তবে ব্লগার ডট কম এফটিপির মাধ্যমে অন্য হোষ্টেও ব্লগ প্রকাশ করতে পারবেন । ব্লগিং সাইট হিসাবে ব্লগার ডট কম ই আমার প্রথম পছন্দ।
www.wordpress.com
২০০৫ সালের আগষ্টে বিটা টেষ্টিং সাইট হিসাবে এবং নভেম্বর ২১ ২০০৫ সালে অটোম্যাটিক কর্তৃক প্রকাশিত ওয়ার্ডপ্রেস ডট কম মুলত ওয়েব ব্লগ হোষ্টিং সরবরাহকারী। এটি সম্পুর্ণ ওপেন সোর্স সফটওয়ার ওয়ার্ডপ্রেস কৃর্তক প্রকাশিত। ব্লগিং প্লাটফর্ম হিসাবে আমার দ্বিতীয় পছন্দ ওয়ার্ডপ্রেস ডট কম।
www.tumblr.com
টাম্বলর মুলত মাইক্রোব্লগিং প্লাটফর্ম যেখানে ব্যবহারকারীরা লেখা, ভিডিও, ছবি, লিংক , উক্তি অডিও ইত্যাদি আপলোড করতে পারেন। ব্যবহারকারীরা একজন আর একজনকে অনুসরন করতে পারেন। এই সেবাটি মুলত সহজ ব্যবহারের উপর গরুত্ব প্রদান করে।
www.quora.com
quora মুলত প্রশ্ন উত্তর ভিত্তিক সাইট যেখানে, ব্যবহারকারীরা প্রশ্ন করেন এবং অন্যান্যরা উত্তর দেন। এটি অনেকটা ইয়াহু এবং স্টকওভারফ্লো এর মত হলেও তাদের ব্লগিং ফাংশন এটিকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করেছে। প্রশ্ন-উত্তরের জন্য সেরা ব্লগিং সাইট এটি।
www.weebly.com
২০০৬ সালে ব্যাপকভাবে নতুনদের জন্য উইবলি তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ফেইসবুকের মাধ্যমে লগইন করে উইবলিতে ব্লগ তৈরী করতে পারবেন । ১০০ এর অধিক প্রফেশনাল টেম্পলেট এবং ওয়েবসাইট তৈরীর সহজ অভিজ্ঞতার কারনে এই সাইটটি অন্যতম ওয়েবসাইট।
এছাড়া edublogs.org, blog.com, www.wix.com এর মতো এইরকম আরো অনেক সাইট আছে যেখানে আপনি ব্লগ লিখে পাবলিশ করতে পারেন। এছাড়া আপনি নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করেও সেখানে ব্লগ পাবলিশ করতে পারেন।
আপনি যখন লিখবেন, আপনাকে অনেক পড়তে হবে এবং বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে। পড়াশুনা ছাড়া লেখালেখি বলতে পারেন প্রায় অসম্ভব। নিয়মিত ভালো এবং জনপ্রিয় ব্লগারদের সাইট পড়ুন। তাদের লেখার ধরন অনুসরণ করুন। তাদের লিখা অনুসরণ করতে করতে এক সময় আপনার নিজস্ব লিখার স্টাইল তৈরি হবে, যা আপনাকে সবার চাইতে ইউনিক করে তুলবে। আপনাদের সুবিধার্থে কিছু ব্লগ বা সাইট তুলে ধরা হলো, যেখান থেকে আপনারা আর্টিকেল রাইটিংয়ের ধারণা পেতে পারেন -
http://www.copyblogger.com
http://www.contentiscurrency.com
http://www.menwithpens.ca
http://www.fuelyourwriting.com
http://www.writetodone.com
http://www.dailywritingtips.com
আপনি যদি একজন ভাল কনটেন্ট বা আর্টিকেল রাইটার হতে চান তবে আপনার অবশ্যই ইংরেজি ভাষা সম্পর্কে ভাল জ্ঞান এবং বোঝার ক্ষমতা থাকতে হবে। ছোট, মাঝারি ও লম্বা বাক্যগুলো লিখতে ব্রিটিশ ও আমেরিকান শব্দ ব্যবহারেও সতর্ক হতে হবে। যাতে বাক্য গুলা মিশ্রণ না হয়। বানান শুদ্ধর পাশাপাশি গ্রামার সম্পর্কেও ভালো ধারণা থাকতে হবে। নিচে কিছু গ্রামার চেকাররের নাম দিচ্ছি যাতে আপনি সহজেই কন্টেন্টের ভুল গুলো শুদ্ধ করে নিতে পারেন -
http://paperrater.com
http://Spellchecker.net
http://SpellCheckPlus.com
http://www.grammarly.com
http://www.whitesmoke.com
আপনি যতই ফ্রি হ্যান্ড লিখুন না কেন, কিছু শব্দ অনিচ্ছাকৃত ভাবে হলেও মিলে যাচ্ছে। তাই আপনি যদি কপিরাইটিং ছাড়াই বিষয়বস্তু লিখতে চান, তাহলে আপনাকে একটি টুলস দিয়ে আপনার টেক্সট চেক করতে হবে। কারণ কপি করা কনটেন্ট র্যাংক করে না। কনটেন্টে কপি থাকলে বরং আপনি ডুপ্লিকেট কনটেন্টের জন্য পেনাল্টিও খেতে পারেন। নিচে কিছু কনটেন্ট কপি চেকার দেয়া হলো, যা দিয়ে আপনি আপনার কনটেন্ট কপি কিনা, তা চেক করে নিতে পারেন -
ফ্রি টুলস -
https://plagiarismdetector.net/
https://www.duplichecker.com/
https://smallseotools.com/ ইত্যাদি।
পেইড টুলস -
Grammarly,
copyscape,
Quetext ইত্যাদি।
এক এক আর্টিকেল লেখার স্টাইল এক এক রকম হয়ে থাকে। যেমনঃ আপনার ব্লগ আর্টিকেল এর সাথে প্রোডাক্ট কনটেন্ট এক না আবার সার্ভিস কনটেন্টও অন্য রকম। তাই লিখার সময় আপনাকে অনেক পড়াশুনা করে নিতে হবে, যাতে আপনার লেখা কনটেন্ট পরে পাঠক উপকৃত হয়। ব্লগ কনটেন্ট কীভাবে লিখতে হয় তার কিছু উদাহরণ নিচে তুলে ধরা হলো -
১. আর্টিকেল সম্পর্কে ইন্ট্রো (ভিজিটর কি পাচ্ছে আর্টিকেলটায়)
২. সাব-হেডিং ব্যবহার করুন
৩. ছোট ছোট প্যারাগ্রাফ ব্যবহার করুন (সাব-হেডিং এর মধ্যে)
৪. বুলেট পয়েন্ট এবং লিস্ট ব্যবহার করুন
৫. প্রশ্ন ও উত্তর ব্যবহার করুন এর জন্য আপনি answerthepublic অথবা গুগল থেকে “People may ask” প্রশ্ন ব্যবহার করতে পারেন।
৬. বিভিন্ন পরিসংখ্যান/নাম্বার/কোটেশন (উইকিপিডিয়া/ইউটিউব থেকে নিতে পারেন )
৭. উপসংহার।
আর্টিকেল এর মান ভালো করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। নিচে ঐ বিষয়গুলো চেকলিস্ট আকারে দিয়ে দিচ্ছি যাতে আপনাদের বোঝা সহজ হয় -
১. লিখা ডাইরেক্ট কপি করা বা লিখার কি কোনো অংশ কপি করা?
২. লিখার আগে আপনি ভালোভাবে রিসার্চ করেছেন কি?
৩. আপনার লেখা আর্টিকেলটি কি পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী হয়েছে?
৪. আপনার লেখাটির তথ্য/উপাত্ত/পরিসংখ্যানগুলো কি আপডেটেড?
৫. আর্টিকেলটিতে কি ব্যাকরণে/বাক্য/শব্দ চয়নে ভুল আছে?
৬. আর্টিকেলটি কি পাঠকের পড়তে ভালো লাগবে?
৭. আপনার আর্টিকেলটি কি সার্চ ইঞ্জিন ফ্রেন্ডলি?
৮. লিখাটি কি পাঠক নিজের ইচ্ছাতেই শেয়ার করবে?
এই চেকলিস্ট ফলো করলে আপনি অবশ্যই একজন ভালো মানের রাইটার হতে পারবেন। কিন্তু কখনোই কপি কনটেন্ট বা রি-রাইট কনটেন্ট ব্যবহার করবেন না। কোনো টুলস দিয়েও না। করলে আপনি র্যাংক তো পাবেনই না বরং উল্টো পেনাল্টি খাবেন।
আপনি যদি আর্টিকেল রাইটিং এর সঠিক পদ্ধতি জানেন তবে আপনি অনলাইনে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবেও নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। ক্যারিয়ার বলতে আমরা কি বুঝি? - ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী বা বিসিএস অফিসার ইত্যাদি। এগুলোর কোনো একটি অর্জনে ব্যর্থ হলে আমরা মনে করি লাইফটাই যেন শেষ। এই পুরোনো ধারণাকে আঁকড়ে ধরে আছি এখনো। কিন্তু এখন ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের প্রতিটি প্রতিভা সরাসরি অনলাইনে উপস্থাপন করার সুযোগ রয়েছে। ফলে আমাদের সুপ্ত বা লুকানো প্রতিভা ব্যবহার করে ঘরে বসেই একটি ডিজিটাল ক্যারিয়ার আমরা গড়ে নিতে পারি। ব্লগ পোস্টের জন্য আপনি উপরের গাইডলাইন ফলো করে যদি আর্টিকেল রাইটিং করেন তাহলে আপনার ঐ আর্টিকেলটি আরো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে ভিজিটরদের কাছে। আর আপনার আর্টিকেল যত বেশি সুন্দর ও তথ্যপূর্ণ হবে আপনি তত বেশি ভিজিটর বা ট্র্যাফিক আপনার ওয়েবসাইটে নিয়ে আসতে পারবেন।