আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) কী?
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে বলা হয় ভবিষ্যৎ। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স হলো বিজ্ঞানের এমন একটি আবিষ্কার যার মাধ্যমে মানুষের নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে কম্পিউটার দ্বারা অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। বর্তমান আধুনিক বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় আমরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার দেখে থাকি।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় রোবট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনেক বড় একটি আবিষ্কার। বড় বড় বিভিন্ন কোম্পানি বর্তমানে তাদের পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য রোবট ব্যবহার করে থাকে। তাছাড়া বর্তমানে আমরা বিভিন্ন ধরেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর ওয়েবসাইট দিয়ে নিজেদের দৈনন্দিন কাজ করছি। যেমন : চ্যাট জিপিটি, মিডজার্নি , লিওনার্দো AI তাছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর ওয়েবসাইট রয়েছে যার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরেন ওয়েবসাইট তৈরি , ডিজাইন বানানো , রিসার্চের কাজ ইত্যাদি দ্রুত সময়ের মধ্যে করতে পারছি।
কীভাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তৈরি হলো বা এর ইতিহাস কি ?
১৯৫৬ সালে ডার্টমাউথ কলেজের একটি গবেষণায় প্রথম এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৮ সালে জন ম্যাকার্থি প্রোগ্রামিং ভাষা লিস্প তৈরি করেন যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ব্যবহৃত সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা হয়ে উঠে। ৬০- এর ধসকের দশকের মাঝামাঝিতে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ এটির গবেষণার জন্য প্রচুর পরিমাণে তহবিল গঠন করার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ল্যাবরেটরিস প্রতিষ্ঠিত হয়। AI এর অন্যতম একজন প্রতিষ্ঠাতা হারবার্ট সাইমন ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলেন "মেশিন বিশ বছরের মধ্যে একজন মানুষ যা করতে পারে তা করতে সক্ষম হবে ।" আর বর্তমানে এই কথাটি পুরোপুরি সত্য না হলেও অদূর ভবিষ্যতে কথাটি যে সত্যে পরিণত হবে সেটি বোঝার জন্য আমাদের কোনো গবেষণা করার দরকার পড়ে না।
৮০ এর দশকের শুরুতে এআই বাণিজ্যিক সাফল্য লাভ করা শুরু করে। ৮৫ সাল নাগাদ এআই এর মার্কেট ভ্যালু ১ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পোঁছায়। ৯০ এর দশকের শুরুতে এআই মাইনিং, চিকিৎসা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এআই এর ব্যবহার শুরু হয়। ডিপ ব্লু ১১ই জুন, ১৯৯৭ তারিখে একজন দাবা চ্যাম্পিয়ন গ্যারি কাসপারভকে পরাজিত করার জন্য প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রিত দাবা খেলোয়াড় হয়ে উঠে।২০১০ এর মাঝামাঝি পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে মেশিন লার্নিং অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যবহার করা হতো। ২০১২ সালে গুগলের মধ্যে এআই ব্যবহার করার জন্য ২৭০০ এরও বেশি প্রকল্প বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ২০২৩ সালে এসে আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ আরো অনেক অনেক বেশি দেখতে পাই।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কীভাবে কাজ করে ?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মূলত কম্পিউটারের সাধারণ অ্যালগরিদম ও মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে কাজ করে থাকে। এটি অ্যালগরিদম ও মেশিন লার্নিং কাজে লাগিয়ে বিশাল তথ্যভান্ডার বিশ্লেষণ করে তার ফলাফল ও অনুমান জানিয়ে থাকে। মানুষ কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়লেও মেশিন কখনো ক্লান্ত হয় না। আর তাই এটি ব্যবহার করে অনেক বেশি কাজ করিয়ে নেয়া সম্ভব তাও আবার অল্প সময়ের মধ্যে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যা একদিন মানুষের মস্তিষ্কের আদলে নিজেই যেকোনো কাজের সিদ্ধান্ত দিতে পারবে।
এই সেক্টরের বর্তমান অবস্থা :
AI বর্তমানে অসাধারণ উন্নতি করেছে। যার সাহায্যে এই সিস্টেমটি বর্তমানে মানুষের ভাষা বুঝতে পারে, ছবি চিনতে পারে এবং এমনকি গাড়ি চালাতে পারে। যেটি বিজ্ঞানের একটি চমৎকার। যা বর্তমানে আমাদের কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। তাছাড়া কিছু AI ভিত্তিক ওয়েবসাইট দিয়ে আমরা বর্তমানে কনটেন্ট লেখা, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভয়েস তৈরি, ওয়েবসাইট তৈরি ইত্যাদি। এসব কাজের জন্য ChatGPT , Midjourney, 10web, Murf.AI ইত্যাদি AI টুল বা ওয়েবসাইটগুলো কাজে লাগিয়ে বর্তমানে এই কাজগুলো সহজে করা যাচ্ছে।
AI মূলত মেশিন লার্নিং এই অ্যালগরিদম কাজে লাগিয়ে তৈরি হয়েছে যা AI কে শিখতে ও মানিয়ে নিতে সাহায্য করে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স এর লক্ষ্য :
আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে মেশিনকে মানুষের মতো করে চিন্তাশক্তি প্রদানের মাধ্যমে যেকোনো কাজের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা কেননা মানুষ একটি কাজ করতে যতটুকু সময়য়ের দরকার হয় মেশিনের তার থেকেও অনেক কম সময় এবং দ্রুততার সাথে ও নির্ভুল ভাবে কাজটি করতে পারে।
কিন্তু মেশিনের মেশিনের নিজস্ব কোনো চিন্তাশক্তি বা বুদ্ধি নেই এটি মানুষের দেয়া ইনপুট অনুযায়ী কাজ করে। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনুযায়ী আপনি যখন মেশিনকে কোনো ইনপুট দিবেন তখন সেটি আপনাকে তার মধ্যে নিজস্ব যে তথ্যভান্ডার রয়েছে সেটি যাচাই বাছাই করে আপনাকে একটি ফলাফল প্রদান করবে। এইভাবে দিন দিন গবেষণার মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আরো শক্তিশালী করে গড়ে তুলার মাধ্যমে মানুষের কাজ আরো অনেক বেশি সহজ করে দেয়াই হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার লক্ষ্য।
সম্ভাব্য সুবিধা এবং চ্যালেঞ্জসমূহ
সুবিধা: AI র মধ্যে অনেক দক্ষতা থাকে যার সাহায্যে তারা অনেক কম সময়ে অনেক জটিল কাজ করে ফেলতে পারে। এই মানুষের কাজকে সহজ করে দিয়েছে যার ফলে আজ কাল মানুষ সহজেই অনেক সময়সাপেক্ষ কাজ করতে পারছে।
চ্যালেঞ্জসমূহ : অনেক বেশি ক্ষমতা যখন পাওয়া যাই দায়িত্বও তখন বেড়ে যায়। AI নিয়ে উদ্বেগের একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে AI আর কারণে অনেক তাদের চাকরি হারানোর শঙ্খা দেখা দিচ্ছে। যা মোকাবেলা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাছাড়া AI কারণে বিভিন্নভাবে মানুষের ছবি এডিট করে মানুষকে বিশেষ করে নারীদের সম্মানহানির চেষ্টা করছে। তাই AI আমাদের কিছু ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিচ্ছে।
বিনোদন জগতে AI: এটি ব্যবহার করে বিভিন্ন রকমের ডিজিটাল চরিত্র তৈরি করে সেটি দিয়ে বিভিন্ন ভাবে ভিডিও বা কনটেন্ট বানিয়ে মানুষকে আনন্দ দেয়া যায়।
শিক্ষাক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার: শিক্ষাক্ষেত্রে AI গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে শিক্ষার্থীরা এটি কাজে লাগিয়ে তাদের পড়ালেখা অনেক বেশি সহজ করতে পারবে। AI এর জন্য মেশিন লার্নিং এর ভূমিকা : মেশিন লার্নিং AI এর মূল চালিকাশক্তি এটি সিস্টেমকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স এর ভবিষ্যৎ :
AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যতে একটা সময় সময় আসবে যখন আমরা AI ছাড়া একটা মুহূর্তও কল্পনা করতে পারবো না। দিনে দিনে প্রত্যেকটি সেক্টরে AI এর গুরুত্ব অনেক বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে , বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কোম্পানিতে রোবট ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের পণ্যের উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়িয়ে নিয়েছে তাছাড়া এর ফলে কাজের মধ্যে কোনো বিরতি দিতে হয় না কেননা রোবট মানুষের মতো কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে না।
২০২২ সালে AI এর মার্কেট সাইজ যেখানে ৩৮৭ বিলিয়ন ডলার ছিল ২০২৯ সালে সেটি ১৩৯৪ বিলিয়ন ডলার ছড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর থেকেই আমরা কিঞ্চিৎ ধারণা করতে পারি যে ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চাহিদা কি পরিমাণে বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই আমরা সকলে এই বিষয়টির উপর জ্ঞান অর্জন করে নিজেদের সময়ের থেকে এগিয়ে রাখতে পারি। যাতে করে ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি গুলো নিয়ে আমরা কাজ করতে পারি।
এর থেকে আমরা বুঝতে পারি যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভবিষ্যতের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে আমরা যেমন অনেক উন্নতি করতে পারি তেমনি এর খারাপ দিকগুলো বর্জন করা জরুরি যাতে মানুষের ক্ষতি না হয়। আর তাই আমাদের সকলের উচিত AI এর ভালো দিকগুলো নিয়ে কাজ করে দেশ ও জাতির উন্নতি করা উচিত আর এই জন্য আমাদের AI এর ব্যবহার ভালোভাবে শিখে সেটি নিয়ে আগানো উচিত।
আসন সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ইউ ওয়াই ল্যাবের সকল অনলাইন কোর্সে পাবেন ১০০% স্কলারশিপ! আসন নিশ্চিত করতে রেজিঃ করুন এখনই।