বর্তমান প্রেক্ষাপটে একজন ইথিক্যাল হ্যাকার এর ভ্যালু কতটুকু?

Created by UY LAB in Freelancing 18 Mar 2024
Share

হ্যাকার শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে ভেসে আসে ভার্চুয়াল জগতের ব্যক্তিদের কথা, যারা অবৈধ উপায়ে কোনো ওয়েবসাইট বা নেটওয়ার্ক সিস্টেমে প্রবেশ করে তার ক্ষতিসাধন করে থাকে। হ্যাকিং এর মাধ্যমে কারো ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস কিংবা অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাও আমরা প্রায়ই শুনে থাকি।

এসব শুনতে শুনতে আমাদের সবার ধারণা জন্মেছে যে হ্যাকিং মানেই ক্ষতিকর বা খারাপ কিছু। বাস্তবে কিন্তু তেমনটা একেবারেই না।হ্যাকিং অবশ্যই খারাপ, তা মানুষের বা কোনো কোম্পানির  ক্ষতি সাধন করার উদ্দেশ্যেই করা হয়। তবে উপকারী হ্যাকিংও আছে। হ্যাঁ ঠিকই বলছি, অন্তত এই লেখা পুরোটা পড়ার পর আপনারও ধারণা পাল্টাবে,এই বিষয়ে আপনি আরো ক্লিয়ার হয়ে যাবেন ।

ইথিক্যাল হ্যাকিং হোয়াইট হ্যাট হ্যাকিংয়েরই একটা ধরন। ইথিক্যাল শব্দটার অর্থ আমরা সবাই জানি। এটার অর্থ নৈতিক বা বৈধ,অর্থাৎ এই হ্যাকিং করা হয় কোনো একটা প্রতিষ্ঠান যেন সিকিউর থাকে সেই জন্য, যেন সিস্টেমের সিকিউরিটি হোল (নিরাপত্তা ছিদ্র) ইত্যাদি ফিক্স করে তাদের সিস্টেমটিকে আরো নিরাপদ,আরো বেশি সিকিউর করা  যায়I একজন দক্ষ হ্যাকার তার হ্যাকিং স্কিলকে কাজে লাগিয়ে ক্লায়েন্টকে যথাযথ সেবা প্রদান করতে পারেন ৷ 

আসুন Ethical Hacking সম্পর্কে আরোও বিস্তারিত আলোচনা করি 


ইথিক্যাল হ্যাকিং কী?

আমরা 'হ্যাকিং" শব্দটা শুনলেই অনেকটা বিপদজনক মনে করে থাকি। আবার আমরা এটাও ভাবি মানুষজন হ্যাকিং শব্দটা শুনলে কোন নজরে দেখবে? তাই আগে আমাদেরকে বুঝতে হবে Ethical Hacking হচ্ছে একটি বৈধ হ্যাকিং। 

তার মানে হ্যাকাররা কোন প্রতিষ্ঠানের সিস্টেমকে পূর্বের চেয়ে অধিক নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য কাজ করে থাকে। সাধারণভাবে চিন্তা করে কিছু Common নিরাপত্তা দেওয়া হয় সেটা আমরা সবাই জানি। যেমন ধরুন, Password কে Encrypt করে ফেলা। 

এতে করে Plain Text এর মত Password পাওয়া যাবে না। এরকম প্রচুর Common নিরাপত্তা দেওয়া হয়ে থাকে। হ্যাকিং এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে কেউ কোনো বৈধ অনুমতি ছাড়াই কম্পিউটার বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে। 

মূলত যারা হ্যাকিং করে তারাই হ্যাকার, এই বিষয়গুলো আপনারা মোটামুটি সবাই জানেন। আমরা অনেকেই মনে করি যে হ্যাকিং হচ্ছে শুধু একটি ওয়েব সাইট হ্যাকিং এবং অনেকে মনে করেন হ্যাকিং মানে শুধু কম্পিউটার বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হ্যাক করা, তাই কি? আসলে তা না। হ্যাকিং অনেক ধরনের হতে পারে। 

আইনি অনুমতি ছাড়া আপনার মোবাইল ফোন, ল্যান্ড ফোন, গাড়ি ট্র্যাকিং, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স এবং ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করলে তাও হ্যাকিংয়ের আওতায় পড়ে। অবৈধভাবে কোন ব্যক্তি যদি আপনার সিস্টেমে প্রবেশ করে সে ব্যক্তিই হ্যাকার এবং উক্ত সিস্টেমটা তখন পুরোপুরি হ্যাকিং এর শিকার।


ইথিক্যাল হ্যাকার হবেন কী করে?

একজন হ্যাকার হতে হলে আপনাকে সর্বপ্রথম কম্পিউটারের বেসিক থেকে অ্যাডভান্সড লেভেল এর সবগুলো জিনিস ভালোভাবে জানা থাকতে হবে। বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম, বিশেষ করে লিনাক্স সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে। 

হ্যাকিং শেখার জন্য এইসব জিনিস শিখা গুরুত্বপূর্ণ:

- নেটওয়ার্কিং এবং সিস্টেম এডমিনিস্ট্রেশন সম্পর্কে ধারণা

- নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি নলেজ

- লিনাক্স/ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেম

- পেনটেস্টিং টুলস এবং টেকনিক (যেমন Metasploit)

কিছু প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ আয়ত্তে থাকতে হবে,পাইথন, জাভা, সি ইত্যাদি প্রোগ্রামিং ভাষা শিখা সহায়ক হবে টুল এবং অটোমেশন তৈরিতে। অনলাইনে প্রচুর পেইড কোর্স পাওয়া যায় ইথিক্যাল হ্যাকিং শেখার। নিয়মিত প্র‍্যাকটিসের সাহায্যে নিজের স্কিল বাড়িয়ে দক্ষ একজন ইথিক্যাল হ্যাকারে পরিণত করতে পারেন নিজেকে ।


কেন হবেন হ্যাকার?

তথ্য বা ডাটা একটি সংস্থার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। তাই তথ্য সুরক্ষিত রাখা কোনও সংস্থার গোপনীয়তা রক্ষা করে এবং একটি সংস্থাকে প্রচুর অর্থ সাশ্রয় করাতে সাহায্য করে।

হ্যাকিং- পেপালের মতো অর্থ লেনদেনকারী সংস্থাগুলির ব্যবসায়ের ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু ইথিক্যাল হ্যাকিং এইসব সংস্থাগুলিকে সাইবার অপরাধীদের চেয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে রাখে।

ইথ্যিকাল হ্যাকারদের চাহিদা যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে সাইবার ভিত্তিক বিভিন্ন অপরাধ এর সংখ্যাও। তাই অনেক দেশেই এখন ইথিক্যাল হ্যাকারদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এখন ইথিক্যাল হ্যাকারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। 

বাংলাদেশ সরকারের অনেক সাইট এখনও অসুরক্ষিত, সেখানে প্রায়শই সাইবার হামলার কথা শোনা যায়। এ পরিস্থিতিতে এখন ইথিক্যাল হ্যাকারদের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। 

তাছাড়াও এখন বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানি রয়েছে যারা তাদের সাইট এর সুরক্ষার জন্য ইথিক্যাল হ্যাকারদের নিয়োগ দিচ্ছে। আপনি যদি একজন  Ethical হ্যাকার হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে কোনো প্রকার আইনি জটিলতায় পড়তে হবে না।

আপনি ইচ্ছা করলে ঘরে বসেও ফাইবার, আপওয়ার্ক থেকে বিভিন্ন ক্লায়েন্ট  থেকে অর্ডার নিয়ে তাদের সাইট এর ত্রুটিগুলো খুঁজে বের করে ইথিক্যাল হ্যাকিং এর কাজ করতে পারেন। এগুলো বিদেশি সাইট হওয়ায় আপনি এখান থেকে আরোও অধিক টাকা আয় করতে পারেন।


ইথিক্যাল হ্যাকিং এর ভ্যালু

বর্তমানে সমগ্র বিশ্বে ইথিক্যাল হ্যাকারদের তুমুল চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা মোটা অঙ্কের টাকার  বিনিময়ে ইথিক্যাল হ্যাকিংয়ে দক্ষ ব্যক্তিদের চাকরির অফার করছে। 

কিন্তু এই ফিল্ডে দক্ষ লোকের বিরাট অভাব। তাই আপনারা যারা ইথিক্যাল হ্যাকিং ও সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে আগ্রহী তাদের জন্য এটা সুবর্ণ সুযোগ। 

সঠিক গাইডলাইন অনুযায়ী পরিশ্রম করলে আপনিও এই ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে পারবেন। পেশা হিসেবে ইথিক্যাল হ্যাকিং অত্যন্ত সম্মানজনক এবং আয়ও বেশ ভালো। 

সরাসরি কোনো প্রতিষ্ঠানে কিংবা অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম যেকোনো জায়গাতেই আপনার অর্জিত দক্ষতা কাজে লাগাতে পারবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক ইথিক্যাল হ্যাকিং শেখার পূর্বে যে-সব জিনিস জানা গুরুত্বপূর্ণ -

১.কম্পিউটারের মৌলিক বিষয়সমূহ I

২.অপারেটিং সিস্টেমের গঠন ও কার্যপ্রণালি I

৩.ডেটা কমিউনিকেশন ও কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং I

৪.প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজে দক্ষতা I

৫.ওয়েব টেকনোলজিস সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা I

৬.ইন্টারনেট প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিস্তারিত জ্ঞান I

৭. ক্রিপ্টোগ্রাফির বিভিন্ন অংশের সংজ্ঞা এবং তার কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে জানা I

৮.ভার্চুয়াল মেশিন সেট আপ দিতে পারা I

৯.লিনাক্স ব্যবহারে অভ্যস্ত হওয়া I

১০.ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে  কাজ করার অভিজ্ঞতা অভিজ্ঞতা I

১১. হ্যাকিং ও সাইবার সিকিউরিটির বেসিক টার্মগুলো জানা থাকা I

এসব বিষয় জানা থাকলে আপনি ইথিক্যাল হ্যাকিং শুরু করতে পারেন। এছাড়া Ethical হ্যাকিং আয়ত্ত  করার জন্য সহায়ক কিছু আইটি সিকিউরিটি সার্টিফিকেশন এর নাম নিম্নে দেওয়া হলো -

১.সার্টিফাইড ইথিক্যাল হ্যাকার (সিইএইচ) I

২.লাইসেন্সড পেনেট্রেশন টেস্টার (এলপিটি) I

৩.সার্টিফাইড ইনফরমেশন সিস্টেমস সিকিউরিটি প্রফেশনাল (সিআইএসএসপি) I

৪.অফেন্সিভ সিকিউরিটি সার্টিফাইড প্রফেশনাল (ওএসসিপি) I

৫.কম্পটিএ সিকিউরিটি প্লাস I


ইথিক্যাল হ্যাকিং এ ক্যারিয়ার গঠন ও সম্ভাবনা 

প্রযুক্তির বিপ্লবের এই যুগে Ethical Hacker এই পেশার চাহিদা প্রতিনিয়ত ক্রমবর্ধমান হারে করে বেড়েই চলেছে। সাইবার স্পেসে অনৈতিক কাজ যত বাড়ছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সেগুলো প্রতিরোধ করার বিভিন্ন উপায়। কাজেই ইথিক্যাল হ্যাকিং বর্তমানে অনেক সম্ভাবনাময় একটি পেশা। 

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রফেশনাল ইথিক্যাল হ্যাকাররা মোটা অঙ্কের বেতনে চাকরি করছেন। এছাড়া ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসেও একটি অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত ইথিক্যাল হ্যাকিং। অনেক ক্লায়েন্টই তাদের বিভিন্ন সিকিউরিটি ইস্যুতে ইথিক্যাল হ্যাকারদের হায়ার করে থাকেন।


সবশেষে এটাই বলবো,ইথিক্যাল হ্যাকার হলো একজন আর্টিস্ট। আর এটি একটি শিল্প,আপনি এই  শিল্পকে যত চর্চা করবেন তত তাড়াতাড়ি শিখতে পারবেন। আপনি চাইলেই ১ দিন বা ২ দিনে একজন হ্যাকার হতে পারবেন না। এর জন্য আপনাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। এটা প্রতিনিয়ত চলতে থাকা একটা যুদ্ধের মতো। 

তাই শুধুমাত্র কোনো কিছু শিখে বসে থাকলেই হবে না, পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। এভাবে প্রতিদিন নিজের জ্ঞান ও দক্ষতা সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি করতে হবে। 

একজন প্রকৃত হ্যাকার হতে হলে এটার পিছনে আপনাকে কমপক্ষে বছরখানেক সময় ধৈর্য সহকারে দিতে হবে কেননা হ্যাকিং এর অন্যতম মন্ত্র হলো ধৈর্য। এগিয়ে চলুন আপনার সামনের দিন গুলো সম্ভাবনাময় হোক ধন্যবাদ।

Comments (0)

Share

Share this post with others

অনলাইন কোর্সে ১০০% স্কলারশিপের সুযোগ

অনলাইন কোর্সে ১০০% স্কলারশিপের সুযোগ

আসন সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ইউ ওয়াই ল্যাবের সকল অনলাইন কোর্সে পাবেন ১০০% স্কলারশিপ! আসন নিশ্চিত করতে রেজিঃ করুন এখনই।