ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার পূর্বে যে সকল বিষয় জেনে রাখা জরুরি

Created by UY LAB in Freelancing 23 Oct 2023
Share

ফ্রিল্যান্সিং! বর্তমান যুগের সবথেকে বেশি উচ্চারিত শুদ্ধ গুলোর মধ্যে একটি। মূলত অনলাইন এ স্বতন্ত্রভাবে বিভিন্ন মার্কেটেপ্লেসে কাজ করাকে আমরা ফ্রিল্যান্সিং হিসেবে জানি। তবে এই কাজটি কিছু মানুষ অনেক বেশি সহজ মনে করলেও বিষয়টি আসলে খুবই সহজ যে তেমনটা নয়। তবে বলা যায় আবার একেবারে কঠিনও নয়।

কিছু পদক্ষেপ জেনে সঠিকভাবে স্কিল ডেভেলপ করে বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক মানুষ এই পেশাতে সফল হচ্ছে। ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (BFDS) এর তথ্য মতে বর্তমানে বাংলাদেশে ১০৫০০০০ জন এক্টিভ ফ্রিল্যান্সার রয়েছে যারা সফলতার সাথে কাজ করছে। বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের মতে এই সেক্টর থেকে ফ্রিল্যান্সাররা বছরে ১০০ মিলিয়ন ডলারেও বেশি আয় করছে। যা থেকে বোঝা যায় ফ্রিল্যান্সিং খুবই সম্ভাবনামূলক একটি পেশা। যাইহোক, সম্ভাবনাময় এই জগতে ডুব দেয়ার আগে কিছু বিষয় আমাদের অবশ্যই জেনে রাখা জরুরি। যা আপনার ফ্রিল্যান্স যাত্রা শুরু করার আগে কাজে লাগবে বলে আশা করা যায়। তাই আজ আমরা সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করবো। 

ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা এবং অসুবিধা 

স্বাধীনতা এবং নমনীয়তা :

এই পেশার অন্যতম বড় একটি সুবিধা হচ্ছে আপনি কখন কোথায় কীভাবে কাজ করবেন তা বেছে নেয়ার স্বাধীনতা। যেখানে আপনিই আপনার বস যার ফলে কাজের স্বাধীনতা রয়েছে। যে নমনীয়তা যেটি আপনাকে আপনার নিজের জন্য খুবই ভালো একটি কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে সাহায্য করে এবং আপনি নিজের ইচ্ছামতো সময় বের করে আপনার ক্লায়েন্টের কাজ করতে পারেন। 

আর্থিক অনিশ্চয়তা :

এই সেক্টরটি যদিও বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় কিন্তু এর একটি অসুবিধা হচ্ছে এখান থেকে আপনি নির্দিষ্ট পরিমাণে কোনো আয় করতে পারবেন না। কেননা আপনি সব মাসে যে সমান বা বেশি কাজ পাবেন তার কোনো গ্যারান্টি নেই আপনি কোনো মাসে কাজ বেশি পাবেন আবার কোন মাসে কম। ইনকামের পরিমাণ সব মাসে সমান থাকবে না। তাই আপনাকে এই পেশার পাশাপাশি আর্থিক নিরাপত্তার জন্য চাকরি বা ব্যবসা করে নির্দিষ্ট একটি আয়ের ব্যবস্থাও করা উচিত। 

দক্ষতা এবং বিশেষীকরণ : 

ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসগুলোতে নিজেকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করতে ক্লায়েন্টদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে আপনি এই সেক্টরের যে কাজটিই করেন না কেন আপনাকে ভালোভাবে দক্ষ হতে হবে তাছাড়া আপনি বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন তার জন্য নিজের উন্নতি করতে নিজের জন্য নিজেকে কিছু পরিমাণে বিনিয়োগ করতে হবে যাতে করে আপনি নিজেকে ভালোভাবে ডেভেলপ করতে পারেন যার ফলে মার্কেটে আপনার চাহিদাও বেড়ে যেতে পারে।

নিজের ভ্যালু নির্ধারণ করুন 

আপনি যে সেবাটি দিবেন তার মূল্য নির্ধারণ করুন:  আপনার সেবার মূল্য নির্ধারণ এই ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। কেননা আপনি আপনার দক্ষতা বিবেচনা করে আপনি যে সেক্টর নিয়ে কাজ করছেন ওই সেক্টরের অন্যরা কি পরিমাণে মূল্য নির্ধারণ করছে সেটি সেটি নিয়ে গবেষণা করে আপনার অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করে আপনাকে নিজের ভ্যালু নির্ধারণ করতে হবে। 

অনলাইনে নিজের পরিচিতি বাড়ান 

ব্র্যান্ডিং এর গুরুত্ব: আপনি নিজের কাজের প্রমাণের জন্য একটি পোর্টফোলিও তৈরি করুন। নিজের জন্য কোনো একটি ওয়েবসাইট তৈরি করুন। যেখানে আপনি আপনার করা সকল কাজ প্রদর্শনের জন্য রাখতে পারেন যেসব আবার আপনি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করতে পারেন যার মাধ্যমে আপনি ক্লায়েন্টদের আকৃষ্ট করার মাধ্যমে অনলাইনে নিজের ব্র্যান্ডিং ও পরিচিতি বাড়াতে পারেন। যা ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে আপনাকে সফল হতে সাহায্য করতে পারে। 

টাইম ম্যানেজমেন্ট এবং ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স 

এই কাজটি শুরু করার পূর্বে আপনাকে টাইম ম্যানেজমেন্ট কীভাবে করতে হয় সে সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। কেননা ফ্রিল্যান্সাররা প্রায়ই কর্ম-জীবনের ভারসাম্য নিয়ে বেগ পেতে হয়। আর তাই একটি রুটিন তৈরি করুন যা আপনাকে ব্যক্তিগত সময় উপভোগ করার পাশাপাশি কাজের জন্যও ভালো একটি সময় ব্যয় করতে সাহায্য করবে।

ফ্রিল্যান্স কাজের সুযোগ খোঁজা 

ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্ম: ফ্রিল্যান্স কাজগুলো খুঁজতে আপনাকে অবশ্যই অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে Upwork, Freelancer এবং Fiverr এর মতো মার্কেটপ্লেসগুলোতে অ্যাকাউন্ট করে পোর্টফোলিও তৈরি করে কাজের সন্ধান করতে পারেন। যে সমস্ত কাজ আপনার দক্ষতার সাথে মিল রয়েছে সে সমস্ত কাজের জন্য বিড করুন। তাছাড়া আপনি যে কাজ পারেন লোকাল মার্কেটেও সে ধরনের কাজের খোঁজ করতে পারেন। যা আপনার কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। 

ক্লায়েন্ট কমিউনিকেশন

কার্যকরী যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা: ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজ করতে হলে আপনাকে ক্লায়েন্টদের সাথে ভালো কমিউনিকেশন করার দক্ষতা থাকতে হবে। তাছাড়া ইংলিশ এ একদম ভালো না হলেও মোটামুটি ভালো হতে হবে যাতে ক্লায়েন্টদের সাথে ভালো কমিউনিকেশন করা যায়। যার সাহায্যে আপনি যদি কোনো ক্লায়েন্ট পেয়ে যান তার সাথে দীর্ঘমেয়াদি কাজের সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন। 

চুক্তি ও আইনি সুরক্ষা

ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করার সময় সর্বদা চুক্তি ভিত্তিতে কাজ করার চেষ্টা করুন যাতে কোনো ভাবে প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে এবং শিকার হলেও আপনি যাতে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ পান। 

নিজের মার্কেটিং করুন 

মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজ পেতে নিজের মার্কেটিং অনেক বেশি কাজে আসে। সোশ্যাল মিডিয়া, ব্লগ এবং বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে আপনার ফ্রিল্যান্স কাজগুলো প্রচার করুন। শেয়ার করুন যাতে করে অনেকের চোখে বিষয়টি পড়ে এবং যারা আপনি যে কাজটি পারেন সে কাজটি করাতে চাচ্ছে তারা যেন এটি দেখে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারে। 

প্রত্যাখ্যান এবং সমালোচনা পরিচালনার দক্ষতা 

প্রত্যাখ্যান এবং সমালোচনা ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ আপনি এই পেশায় আসার পূর্বে বা পরে যেকোনো একটি সময় আপনাকে এই বিষয়গুলোর সম্মুখীন হতে হবে। তাই এই বিষয়গুলো পাশ কাটিয়ে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায় সে সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। কেননা এই সেক্টরে সফল আপনি হতেও পারেন নাও হতে পারেন তবে আপনার আশেপাশের মানুষগুলো আপনি যদি সফল হতে না পারেন তবে আপনার সমালোচনা করবে তাছাড়া অনেকে আপনাকে প্রত্যাখ্যান করবে ওই বিষয়গুলোর থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার মতো আপনার মানসিক শক্তি থাকতে হবে।

আপনার ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার বৃদ্ধি

নিজের এই ক্যারিয়ারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে অবশ্যই সবসময় শেখার প্রবণতা থাকতে হবে আপনার সেক্টর সম্পর্কে নতুন নতুন যা যা আসবে তা তা যত দ্রুত সম্ভব শিখে নিতে হবে। এর জন্য আপনি যদি সবসময় নতুন নতুন কোর্স গুলো থেকে শিখতে পারেন সেটি আপনার জন্য অনেক বেশি কার্যকর হবে। তাই Freelancer ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে আপনাকে সবসময় নতুন কিছু শেখার মানসিকতা থাকতে হবে 

নেটওয়ার্কিং ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক 

আপনার সাথে অন্যান্য Freelancer দের সাথে ভালো একটি সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে যার মাধ্যমে আপনি একটি নেটওয়ার্ক তৈরী করতে পারবেন তখন আপনি যদি কোনো সমস্যায় পড়েন তাদের থেকে সাহায্য নিতে পারবেন। তাছাড়াও আপনার নেটওয়ার্ক যত বেশি শক্তিশালী হবে আপনার Freelancing ক্যারিয়ারের  জন্যও অনেক ভালো হবে। 

পরিশেষে বলা যায় , Freenancing ক্যারিয়ার যদি আপনি গড়তে চান তবে আপনাকে সেটির জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। সবসময় শিখতে হবে শেখার মানসিকতা রাখতে হবে। যার ফলে আপনি উপরোক্ত নিয়মকানুন গুলো ফলো করার মাধ্যমে নিজের ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার গড়ার পথে এগিয়ে যেতে পারেন। তাই আশা করি যারা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতে চান তারা এই কাজ শুরু করার পূর্বে বিষয়গুলো কাজে লাগাতে পারেন। 

Comments (0)

Share

Share this post with others

অনলাইন কোর্সে ১০০% স্কলারশিপের সুযোগ

অনলাইন কোর্সে ১০০% স্কলারশিপের সুযোগ

আসন সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ইউ ওয়াই ল্যাবের সকল অনলাইন কোর্সে পাবেন ১০০% স্কলারশিপ! আসন নিশ্চিত করতে রেজিঃ করুন এখনই।