মানুষ হিসেবে স্বাভাবিক-ভাবেই সবার উপরে যাওয়ার বা অবস্থান করার প্রবণতা আমাদের মাঝে সবসময় বিদ্যমান। সে প্রবণতা মাঝে মাঝে আমাদেরকে হিতে-বিপরীত দিকেও নিয়ে যায়। তেমনি একটা প্রবণতা হচ্ছে কিওয়ার্ড স্টাফিং, যা আমরা গুগলে নিজের ওয়েবসাইটকে র্যাংক করানোর জন্য ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু এটা কি আসলেই আমার বা আমার ওয়েবসাইটের জন্য লাভজনক কিনা, তা নিয়ে আমাদের মাথা-ব্যথা নেই বললেই চলে।
প্রত্যেক লেখক বা রাইটার চায় যে, তার পোস্ট এবং ব্লগ উভয়ই গুগলের প্রথম পৃষ্ঠায় র্যাংক করুক। তবে এর জন্য এসইও এর সাহায্য নিয়ে থাকেন, কারণ এসইও দিয়েই সহজেই পেজ র্যাংক করা যায়।
কিন্তু এখানে কিওয়ার্ডগুলো বারবার ভুল উপায়ে পোস্টে ব্যবহার করার জন্য সাইটের র্যাংক ও পোস্টের র্যাংক সাময়িক সময়ের জন্য উপরে উঠলেও, কিছুদিনের মধ্যেই তা নিচে নেমে যায়। আজকের পোস্টটি নতুন এবং পুরাতন সকল ব্লগারদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, কিওয়ার্ড স্টাফিং কী? এবং কীভাবে এসইও এর জন্য তা বিপজ্জনক? তা সম্পূর্ণ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
তাহলে চলুন আগে কিওয়ার্ড সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক -
মূলত আমরা যা লিখে সার্চ করি, সেটাই কিওয়ার্ড। ধরুন, আপনি ফেইসবুক, ইউটিউব, গুগলে “কিওয়ার্ড কী?” এটি লিখে সার্চ করলেন, তাহলে ঐটি হলো আপনার কিওয়ার্ড।
আরো সহজ ভাষায় বলা যায়, কিওয়ার্ড হল এমন শব্দ বা বাক্যাংশ, যা লিখে মানুষ সার্চ ইঞ্জিনে কোন কিছু খোঁজে বা সার্চ করে। আমরা জানি - মানুষ তাদের প্রশ্নের সাথে উপযুক্ত কন্টেন্ট খুঁজে পেতে সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে থাকে। আর এসইও বা ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভাষায় মানুষের সার্চ করা ওই সব ওয়ার্ডই হল “কিওয়ার্ড”।
কিওয়ার্ড স্টাফিং একটি অ-নৈতিক সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান কৌশল, যা একটি ওয়েব পৃষ্ঠাকে যতটা সম্ভব কিওয়ার্ড দিয়ে ওভারলোড করা হয় আপনার সার্চ ইঞ্জিন র্যাঙ্কিংকে বাড়ানোর উদ্দেশ্যে।
যেটিতে একটি ব্লগার কন্টেন্ট এবং মেটা ট্যাগে, একই ওয়ার্ড বা টার্গেট কিওয়ার্ড, প্যারাগ্রাফ, হেডিং সমস্ত স্থানে বার বার ব্যবহার করে। এভাবে সার্চ রেজাল্টের পেজে প্রথমে র্যাংক করে থাকে।
এখন একটি উদাহরণ দেওয়া যাক - “ব্লগিং থেকে কিভাবে অর্থ উপার্জন করা যায়, আজকাল প্রত্যেকেরই ব্লগিং করতে সক্ষম হওয়া উচিত এবং ব্লগিংয়ে সফল হতে হলে আপনাকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে, কারণ ব্লগিং করতে হলে আপনার অবশ্যই ধৈর্য ধরে ব্লগ লিখতে হবে।” আপনি সম্ভবত লক্ষ্য করেছেন যে এখানে "ব্লগিং" শব্দটি কতবার ব্যবহার করা হয়েছে।
এটিকে আপনি এবং আমরা “স্টাফিং বা স্প্যাম” বলতে পারি। যদি একই বাক্যটি আপনাকে র্যাংক করার জন্য বারবার ব্যবহার করা হয় ।
কিওয়ার্ড অন্য কিছু নয়, এটি এমন একটি জিনিস, যা ব্যবহারকারীরা সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করে। আর এই একই শব্দের বারবার ব্যবহার, গুগল গাইড লাইনের বিরুদ্ধে যায়। আপনি এটিকে ব্ল্যাক এসইও ট্রিকস বলতে পারেন।
যদি আমি আমার ভাষায় বলি, তাহলে পেজ বা পোস্ট ভুলভাবে র্যাংক করার সেরা একটি উপায় হল এটি। এই কৌশলটি 1990 এবং 2000 এর গোড়ার দিকে জনপ্রিয় হয়েছিল, যখন গুগল এবং অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনগুলির ফলাফলের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আজকের সময়ে গুগলের এক্সপার্ট অ্যালগরিদমের সামনে এই পদ্ধতি বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না।
সচরাচর কোথায় কোথায় এটি ব্যবহার করা হয়, সেটি সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক। কারণ কোথায় কোথায় এটি ব্যবহার করা হয় সেটি যদি আপনি না জানেন, তাহলে তো আপনি এই ভয়ানক রীতি-নীতি থেকে বের হতে পারবেন না। এইবার কোথায় কোথায় স্টাফিং করা হয়, সে সম্পর্কেও একটু জেনে নেওয়া যাক -
১. একটি আর্টিকেলের ভিতরে, কিওয়ার্ড ১% থেকে ২% এর মধ্যে রাখতে হবে। যদি এটি SERP এ ৫% থেকে ১০% কিওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়, তাহলে সেটি স্টাফিং হিসেবে বিবেচিত হবে।
২. মেটা ট্যাগ যাকে ব্লগ স্পটে ডেসক্রিপশন ও বলা হয়। এখানে জোর করে কিওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এটা কি ঠিক? মোটেও এটি ঠিক না। এখানে মেটা ডেসক্রিপশনে কন্টেন্টে কী আছে তার সারমর্ম লিখুন।
৩. কিছু ব্লগাররা তাদের পোস্টের টাইটেলে ভুল করে বসে। আবার, কিছু লেখকরা দুই বা তিনবার কিওয়ার্ড ব্যবহার করে এবং কিওয়ার্ডের সংখ্যা বাড়ায়।
এতক্ষণে আপনি নিশ্চয়ই জেনে গেছেন যে, কিওয়ার্ড স্প্যামিং বা স্টাফিং কী। এখন আপনার জন্য এটাও জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, এটি কী এসইও-এর জন্য সত্যিই বিপজ্জনক? Google কী আপনার সাইট ব্যান করতে পারে? এই সব কিছুর উত্তর হল “হ্যাঁ”। স্টাফিং এর ফলে যা হতে পারে তা হলো -
১. আপনার সব আর্টিকেল সার্চ পেজ থেকে হারিয়ে যেতে পারে।
২. আপনার পোস্ট সার্চ পেজে দেখা যাবে না।
৩. কিওয়ার্ড অত্যাধিক ব্যবহারের কারণে, সাইটটি গুগল থেকে ব্যান করতে পারে।
৪. আপনি যদি বারবার কিওয়ার্ড রিপিট করেন, তাহলে আপনার সাইট সাময়িক বা স্থায়ীভাবে ব্লক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৫. পাঠকরা পোস্টটি পড়ার সময় যদি বিরক্তিকর মনে করে থাকে, তবে তারা আপনার পোস্টটি আর কখনোই পড়বে না বা পড়ার আগ্রহ পাবে না।
Keyword Stuffing জানা আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কিছু কন্টেন্ট রাইটার আছেন, যারা ভালো কন্টেন্ট লেখেন, তবুও এমন অনেকে আছেন যারা ভুলবশত এই কৌশলটি ব্যবহার করে থাকেন।
চলুন তাহলে স্টাফিং এড়ানোর ট্রিকসগুলো জেনে নেই -
১. যতটা সম্ভব স্বাভাবিকভাবে পোস্টটি লিখুন, আপনাকে কিওয়ার্ডের দিকে মনোযোগ দিতে হবে না। আপনি যখন একটি মানসম্পন্ন আর্টিকেল লিখতে শুরু করবেন, তখন আপনার কিওয়ার্ডগুলো অটো এড হবে।
২. কিওয়ার্ড ডেনসিটি এবং স্টাফিং, একে অপরের সাথে সরাসরি জড়িত। মানে কিওয়ার্ডের ঘনত্ব যত বেশি হবে, স্টাফিংও বাড়বে। এই কারণেই আমার মতামত এই যে, ঘনত্বকে 1% থেকে 2% পর্যন্ত রাখুন।
৩. মানুষ যে শব্দগুলি সার্চ করে তা লক্ষ্য করার পরিবর্তে LSI (latent semantic indexing) কিওয়ার্ডগুলোতে মনোযোগ দিন। LSI মানে, মানুষ যা সার্চ করে তার কাছাকাছি শব্দ। যেমন - “অনলাইন থেকে কীভাবে ট্রেনের টিকিট কিনতে হয়?” “অনলাইন ট্রেনের টিকিট কীভাবে বুক করবেন”, “ট্রেনে ভ্রমণের জন্য কীভাবে টিকিট বুক করবেন।” এর মতো করে টার্গেটেড শব্দ ব্যবহার করুন।
৫. সর্বদা সম্পূর্ণ আর্টিকেল লিখুন যাতে আপনি আর্টিকেল সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য প্রদান করতে পারেন।
৬. প্রয়োজনে সব শিরোনামে কিওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
৭. মেটা ট্যাগ বা ডেসক্রিপশনে কিওয়ার্ড যুক্ত করুন, তবে কিওয়ার্ড স্টাফিং করবেন না। প্রয়োজনে আপনি LSI কিওয়ার্ড ব্যবহার করতে পারেন।
৮. ভালো কন্টেন্টের জন্য আরও ইউজার ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখুন। এক্ষেত্রে আমি বলব এমন কিছু লিখুন যাতে আপনি কখনোই গুগল থেকে ব্যান না হন। সর্বদা পাঠকের কথা মাথায় রেখে লিখবেন।
যদি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি উপকৃত হন, তাহলে এটি আমার জন্য আনন্দের বিষয়। তবে আপনি যদি একজন ব্লগার হন, তবে স্বল্প মেয়াদের জন্য চিন্তা করবেন না, সর্বদা দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নিয়ে চিন্তা করুন।
এসইও রাতারাতি হয়ে যাবে এমন কোনো বিষয় নয়, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রসেস। আপনি যদি অল্প সময়ের জন্য আপনার উদ্দেশ্য হাসিল করার লক্ষ্যে স্টাফিং করে থাকেন, তাহলে আপনার লক্ষ্য পূরণ হোক বা না হোক, আপনার ওয়েবসাইটের জন্য এটি বিপজ্জনক হয়ে উঠবেই উঠবে।
তাই সবসময় দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা করুন, যাতে আপনার অবস্থান যেখানেই হোক, আপনার ভিত্তিটা যেন মজবুত হয়। গুগল যাতে কখনোই আপনাকে ব্লকলিস্টেড করতে না পারে। আপনি আপনার অডিয়েন্সদের কথা মাথায় রেখে কন্টেন্ট লিখুন। তারা কী চায়? তারা কেমন লেখা পছন্দ করে? কেমন ইনফরমেশন তারা জানতে চায়? এগুলো যখন আপনি আপনার কন্টেন্টের মধ্যে রাখতে পারবেন, তখন দেখবেন আপনার কষ্ট অনেকাংশে কমে গেছে এবং গুগল আপনার কন্টেন্ট বা ওয়েবসাইটকে উপরের দিকে নিয়ে যাবে।
আসন সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ইউ ওয়াই ল্যাবের সকল অনলাইন কোর্সে পাবেন ১০০% স্কলারশিপ! আসন নিশ্চিত করতে রেজিঃ করুন এখনই।