মাইক্রোসফট এক্সেল শেখার কিছু ইনফরমেটিভ টিপস

Created by UY LAB in Freelancing 10 Mar 2024
Share

আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হল সময়। আজকের প্রযুক্তি এবং সফটওয়্যারগুলোর লক্ষ্যই থাকে কীভাবে মানুষের সময় বাঁচানো যাবে । মাইক্রোসফট এক্সেল এমনই একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। প্রতিষ্ঠানের সকল আয়-ব্যয়ের একটি সম্পূর্ণ ডাটাবেজ তৈরি করাসহ মাত্র কয়েকটি ক্লিকে সব ধরনের পরিসংখ্যান তৈরি করা যায়। আজকাল Microsoft Excel নামটি শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। 


সাধারণ হিসাব নিকাশের কাজ থেকে শুরু করে শিডিউল মেইনটেইন করা, কী করা যায় না এই স্প্রেডশিট সফটওয়্যারটি দিয়ে। বেশিরভাগ মানুষ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের জন্য এক্সেলের ফিচারগুলোর মাধ্যমে কাজ করে থাকে। 


কিন্তু এক্সেলে এমন অসাধারণ সব টুল ও ফিচার রয়েছে যা দিয়ে অনেক সহজে ডেটা অ্যানালাইসিস থেকে শুরু করে অনেক জটিল জটিল কাজও করে ফেলা যায়। আর তাই একাডেমিক থেকে ওয়ার্কপ্লেস, সব জায়গাতেই এক্সেল একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হিসেবে বিবেচিত হয়।


আসুন আজকে আমরা জানব কীভাবে MS Excel আয়ত্ত করবেন।


মাইক্রোসফট এক্সেল কী?


Microsoft Excel হচ্ছে একটি স্প্রেডশিট অ্যানালাইসিস প্রোগ্রাম। আক্ষরিক অর্থে "স্প্রেডশিট" হলো ছককাটা বড় মাপের কাগজ, যেখানে হিসেবাদির কাজ সম্পন্ন হয়। কাগজের স্প্রেডশিটের ঠিক অনুরূপ হচ্ছে মাইক্রোসফট Excel। আপনার যদি বিশেষ কিছু কারিগরি দক্ষতা জানা থাকে তাহলে এই প্রোগ্রাম সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন।


Microsoft Excel এর মাধ্যমে একজন ইউজার স্প্রেডশিটের ডাটা ফরম্যাট, অর্গানাইজ এবং ক্যালকুলেট করতে পারবেন। এই স্প্রেডশিট সফটওয়্যারটি উইন্ডোজ, ম্যাক-ওএস, অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করা যায়।



Microsoft Excel অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামটির সাহায্যে জটিল গাণিতিক গণনা, ডাটা এন্ট্রি ও তথ্যকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনায় নিখুঁতভাবে চার্ট বা গ্রাফ তৈরি করা ইত্যাদি আরও অনেক জটিল কাজকে অতি সহজে  সমাধান করা যায়। এক্সেলের সুবিশাল পৃষ্ঠাটি কলাম ও সারিভিত্তিক সেলে বিভক্ত হওয়ায় এতে বিভিন্ন ডাটা এন্ট্রি করে তথ্য বিশ্লেষণ করা যায় বলে একে স্প্রেডশীট অ্যানালাইসিস প্রোগ্রাম বলা হয়।


এক্সেলের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস


1980 সালে, মাইক্রোসফট আইবিএমের সাথে অংশীদারিত্ব করে এবং বেশিরভাগ আইবিএম কম্পিউটার মাইক্রোসফটের "অপারেটিং সিস্টেম" ব্যবহার করে।


1985 সালে, আইবিএম মাইক্রোসফ্টকে একটি নতুন কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করতে কমিশন দেয়; এই অপারেটিং সিস্টেমটিকে OS/2 বলা হত; আইবিএম-এর জন্য নতুন অপারেটিং সিস্টেম সরবরাহ করার পাশাপাশি, মাইক্রোসফট অন্যান্য কোম্পানির কম্পিউটারের জন্য তার অপারেটিং সিস্টেম বিক্রি করতে শুরু করে।


মাইক্রোসফট সফটওয়্যারের বাজার অধিকাংশই দখল করে নেয় এই অপারেটিং সিস্টেম বিক্রির মাধ্যমে। ১৯৯০ সালের দিকে মাইক্রোসফট ৯০% বাজার দখল করতে সক্ষম হয়।

৩০শে জুন ২০১৪ তে মাইক্রসফট-এর বৈশ্বিক আয় ছিল ৮৬.৮৩ বিলিয়ন ডলার এবং সারা বিশ্ব জুড়ে এর সাথে কর্মরত ছিল ১২৮,০৭৬ জন। এরা সারা বিশ্ব জুড়ে সফটওয়্যার এর উন্নয়ন, নির্মাণ, লাইসেন্স প্রদান এবং তৈরিতে সাহায্য করে আসছেন।


Microsoft Excel প্রথম Microsoft Office স্যুটের অংশ হিসেবে 1985 সালে প্রকাশিত হয়েছিল। এটি বছরের পর বছর ধরে বিকশিত হয়েছে, প্রতিটি নতুন সংস্করণের সাথে নতুন বৈশিষ্ট্য এবং কার্যকারিতা যুক্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, এটি প্রচুর পরিমাণে ডেটা প্রক্রিয়াকরণ এবং বিশ্লেষণ করার ক্ষমতার কারণে ব্যবসা এবং ব্যক্তিদের জন্য একইভাবে একটি অপরিহার্য হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।


এক্সেল এখন মাইক্রোসফটের ক্লাউড-ভিত্তিক অফিস 365 স্যুটের অংশ হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে, এটি ইন্টারনেট সংযোগের সাথে যে কোনও জায়গা থেকে সহজেই ব্যবহারের যোগ্য করে তোলে। 


এক্সেল শেখার ইনফরমেটিভ  টিপস


এখন চলুন দেখে আসি কীভাবে আপনি Microsoft Excel সহজে শিখতে পারবেন তার গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস শেয়ার করবো আপনাদের সাথে। সাধারণত Microsoft এক্সেলের মতো সফটওয়্যারগুলো আয়ত্ত করতে কার্যকরী টেকনিক খুব সহায়তা করে। যারা অভিজ্ঞ তারা সাধারণত এ টিপসগুলো অনুসরণ করেই আজ ক্যারিয়ারে ভালো করছে। তাহলে দেরি না করে চলুন সেই টিপসগুলো জেনে আসি। 


 ১. ড্যাশবোর্ড 


প্রথমে, আপনি যে Microsoft Excel এর যে ভার্সন ব্যবহার করছেন তার ইন্টারফেসের সাথে নিজেকে পরিচিত করুন। প্রথম কয়েকদিন, নতুন ফাইল তৈরি করা, টেমপ্লেট ব্যবহার করা, ডেটা প্রবেশ করানো, ফাইল সংরক্ষণ করা ইত্যাদি, ফন্টের আকার, রং, ইত্যাদি বৃদ্ধি  করার অভ্যাস করুন। এরপর  ধিরে-ধিরে আপনি মাইক্রোসফ্ট এক্সেল কিবোর্ড শর্টকাটগুলিও আয়ত্ত করে নিন।


২. এমএস ওয়ার্ড জানুন 


মাইক্রোসফ্ট এক্সেল শেখার সময়, কেন আপনাকে মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ড পুনরায় শিখতে হবে? আসলে, যারা মাইক্রোসফট ওয়ার্ড জানেন তাদের জন্য এক্সেলের বেসিক ইন্টারফেস বোঝার জন্য এটি সাহায্য করবে । সুতরাং Microsoft Excel শেখার আগে ওয়ার্ড সফটওয়্যারটা আয়ত্ত করা ভালো।


৩. টাইপিং স্পিড 


আপনার অফিসিয়াল কাজের জন্যও টাইপিং স্পিড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার কাজকে আরও নির্ভুল করে তুলবে এবং আপনাকে মাইক্রোসফ্ট এক্সেলে দ্রুত কাজ করার সুযোগ দিবে । তাই, MS Word শিখুন এবং আপনার টাইপিং গতি উন্নত করতে কয়েক সপ্তাহ ইংরেজি ও বাংলা  টাইপিং অনুশীলন করুন।


৪. মেনু আয়ত্তে আনুন 


মাইক্রোসফ্ট এক্সেল মেনু বারে আপনি যতগুলি অপশন পাবেন আপনার কাজে প্রয়োগ করার চেষ্টা করুন  এবং এর ভিতর যেসব পরিবর্তনগুলি পাবেন তা অনুশীলন করার চেষ্টা করুন ৷ 


সাধারণভাবে, আপনি ফাইল, হোম, ইনসার্ট, পেজ লেআউট, সূত্র, ডেটা, ভিউ, প্রিভিউ এবং "রেফারেন্স" এর মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ মেনুতে আরও অনেক ধরনের ফর্ম্যাটিং  পাবেন,  এদের জানুন এবং আয়ত্ত করুন,  তাহলে এক্সেল বুঝতে আপনার জন্য সহজ হবে। 


৫. ফরমেটিং ও পেজ ডিজাইন


মাইক্রোসফ্ট এক্সেলে টেবিল তৈরি এবং ফরম্যাট করার পদ্ধতিগুলো ভালো মতো জানুন । কীভাবে আপনার নিজের টেবিল তৈরি করবেন এবং বিভিন্ন রং, গাঢ়, ইত্যাদি কীভাবে সুন্দরভাবে ডিজাইন করবেন সেটার একটা ভালো আইডিয়া জেনারেট করুন । আপনি যদি একটি নিখুঁত টেবিল ডিজাইন করতে না পারেন, তাহলে পরবর্তী কাজগুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপানের সুযোগ আপনি অনেকাংশে হারাবেন। তাই এখানে অনেক সময় ব্যয় করুন এবং ভালোভাবে পড়াশোনা করুন।



৬. ইনসার্ট ডিলেটিং ও  কলাম রোঁ


মাইক্রোসফ্ট এক্সেলে কলাম এবং সারিগুলি কীভাবে সাজানো যায় এবং টেবিলে কলামের সারিগুলি কিভাবে সাজানো যায় তা শিখুন।  প্রয়োজনে আপনি কীভাবে কলাম/সারি মুছে ফেলবেন (ডিলেট) তাও শিখবেন। 


সাধারণত যেকোনো রোঁ বা কলামে কারসার রেখে রাইট ক্লিক করলে ইনসার্ট, ডিলিট, কাট-কপি ইত্যাদি অপশনগুলো পেয়ে যাবেন। এখান থেকে ইনসার্ট ডিলেটিং শিখে ফেলুন। 



৭. কীভাবে সিম্পল ম্যাথ বাস্তবায়ন করবেন


সহজ সূত্র ব্যবহার করে গণনা শিখুন, মাইক্রোসফট এক্সেলের সাহায্যে আপনি সহজ থেকে জটিল সব সমীকরণ সহজে সমাধান করতে পারবেন। যোগ, বিয়োগ, গুণ এবং ভাগ সহ অটোসাম সূত্রগুলি কীভাবে কাজ করে তা নিয়ে আরও অনুশীলন করুন। তারা আপনাকে মাইক্রোসফ্ট এক্সেলে একটি অ্যাডভান্স লেভেলে এ যেতে করতে সহায়তা করবে।



৮. অটোফিল আয়ত্ত করুন 


অটোফিল অপশন বেশ কার্যকরী একটি কমান্ড। এই অপশন আপনাকে একই ধরনের ডাটা একাধিক সেলে কপি করতে সহায়তা করে। জাস্ট ড্র্যাগের মাধ্যমে আপনি অটোফিল অপশনের সাহায্যে অনেকগুলো সেল ফিল করতে পারবেন। আপনার কাজকে সহজ এবং দ্রুত করার জন্য এটি খুবই কার্যকরী। আপনি values, series, and formulas সব ধরনের অপশনে অটোফিল ব্যবহার করতে পারবেন। সুতরাং অনেক কাজকে সহজ করতে অটোফিল শিখে নিন। 



৯. চার্ট শিখুন 


মাইক্রোসফ্ট এক্সেলে একটি দুর্দান্ত ফাংশন হচ্ছে  চার্ট তৈরি করা। হাজার হাজার ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজ করার জন্য চার্ট তৈরি খুবই উপযোগী। আপনি ইনসার্ট অপশন থেকে যত ধরনের চার্টের প্রয়োজন হয় তা পেয়ে যাবেন এবং সেটা প্রয়োজন মতো ব্যবহার করুন। 


১০. টেবিল তৈরি 


যদিও টেবিল তৈরি মাইক্রোসফট এক্সেলের অন্যতম একটি কাজ। সুতরাং টেবিল কীভাবে ফরমেট করতে হয় এবং আপনার ডাটার ধরণ অনুসারে কীভাবে তা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে হয় তা শিখে নিন। আপনার ক্রিয়েটিভিটির ব্যবহার করুন। ১০. কন্ডিশানাল ফরমেটিং শিখুন   



১১. তথ্যের সঠিক ব্যবহার


এপ্লিকেশনগুলো ব্যবহার করার সময় আপনি অনেক সহজেই এক অ্যাপ্লিকেশন এর তথ্য অন্য অ্যাপ্লিকেশনে ট্রান্সফার করে নিতে পারবেন। 


এক্সেল দিয়ে শুধু তথ্য সংরক্ষণ বা হিসেব করা নয়, এই অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে যেকোনো ধরনের তথ্য অ্যানালাইসিস করতে পারবেন এবং এগুলো যে কারও সাথে শেয়ার করতে পারবেন। আপনার তৈরি স্প্রেডশিট এর ডাটা অনেক সহজেই যে কেউ পড়তে, বুঝতে এবং চাইলে প্রিন্ট করে নিতে পারবে।


১২. কন্ডিশানাল ফরমেটিং শিখুন 


মাইক্রোসফ্ট এক্সেল সম্প্রতি এই সময়ে অনেক এগিয়ে এসেছে। স্প্রেডশীট এবং ড্যাশবোর্ড তৈরি করা উচ্চ-পারফরম্যান্স কাজের জন্য দুর্দান্ত। আপনার ডেটা টাইপের উপর ভিত্তি করে ড্যাশবোর্ড তৈরি করা, বিশেষ করে শর্তসাপেক্ষ ফর্ম্যাটিং। 


ফরমেটিং এ অনেক ধরনের অপশন পাবেন,  আপনার প্রয়োজন অনুসারে সেগুলো ব্যবহার করতে হবে। আপনার শেখার সময় সেজন্য বেশিরভাগ কন্ডিশনাল ফরমেটিং আয়ত্ত করুন। তাহলে আপনার শেখার পুরা প্রসেসটা আরও শক্তিশালী হবে। 


আশাকরি এতক্ষণে মাইক্রোসফট এক্সেল সম্পর্কে অনেক কিছুই জেনেছেন এবং কিছুটা হলেও রপ্ত করতে পেরেছেন। ক্ষুদ্র পরিসরে এক্সেল নিয়ে যতটুকু আলোচনা করেছি; আমি আশা করি এটুকু যে কেউ সঠিক ভাবে অনুশীলন করে রপ্ত করতে পারে তাহলে তার কাছে কোন  ফাংশানই  জটিল বলে মনে হবে না। 


এবং ইচ্ছা করলে নিজেই সূত্র তৈরি করে যে কোন সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।  এভাবে যদি আপনি নিজে এক্সেল শিখতে পারেন তাহলে আপনার ক্যারিয়ারে Microsoft এক্সেলেও অনেক ভালো উন্নতি এনে দিতে পারবে।

Comments (0)

Share

Share this post with others

অনলাইন কোর্সে ১০০% স্কলারশিপের সুযোগ

অনলাইন কোর্সে ১০০% স্কলারশিপের সুযোগ

আসন সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ইউ ওয়াই ল্যাবের সকল অনলাইন কোর্সে পাবেন ১০০% স্কলারশিপ! আসন নিশ্চিত করতে রেজিঃ করুন এখনই।