মোশন গ্রাফিক্স এক্সপার্ট হতে গ্রাফিক ডিজাইন জানা কি খুব জরুরি?

Created by UY LAB in Graphic Design 9 Mar 2024
Share

গ্রাফিক ডিজাইনের রূপকে অ্যানিমেশনের মাধ্যমে প্রকাশ করার প্রক্রিয়াই হলো মোশন গ্রাফিক্স। অনেকেই হয়ত ভেবে থাকেন যে অ্যানিমেশন এবং গ্রাফিক্স দিয়ে তৈরিকৃত মোশন একই জিনিস কিন্তু বাস্তবিক ভাবে দুটি আলাদা জিনিস। মোশন ডিজাইন হলো অ্যানিমেশনের একটি স্টাইল বা রূপ যেটিকে সম্পূর্ণভাবে অ্যানিমেশন বলা যায় না।


মোশন Graphics ডিজাইন হচ্ছে গ্রাফিক ডিজাইনের একটি শাখা যেখানে স্থির চিত্র, লোগো, আইকন, ব্যানার, পোস্টার ইত্যাদিকে কম্পিউটারের মাধ্যমে আকর্ষণীয় করে তোলা হয় এবং সেগুলিকে চলমান করা হয়। মোশন গ্রাফিক ডিজাইন ব্যবহার করে, আমরা বিভিন্ন ধরনের ভিডিও তৈরি করতে পারি, যেমন- লোগো অ্যানিমেশন, টিভি বিজ্ঞাপন, মিউজিক ভিডিও, ওয়েব ভিডিও এবং গেমস ।


মোশন গ্রাফিক্স এবং গ্রাফিক ডিজাইন কি ?


মোশন গ্রাফিক্স ডিজাইন হল গ্রাফিক ডিজাইনেরই একটি ভাগ বা অংশ যেটিকে টেলিভিশন, ফিল্ম অথবা অন্য যেকোন নতুন ভিজুয়াল মিডিয়ামের জন্য ব্যবহার করা হয় | যেমন কোন ফিল্ম দেখার আগে আমরা যে টাইটেল এনিমেশন দেখি বা টিভি তে কোন সিরিয়াল দেখার আগে যে সেই সিরিয়ালটির নাম এর এনিমেশন দেখি অথবা ওয়েব সাইট এর ব্যানারে যখন কোন নাম ঘুরতে-ঘুরতে সামনে আসে এগুলোকেই  মোশন গ্রাফিক্স ডিজাইন বলে | 


Motion Graphics ডিজাইনের মূল উদ্দেশ্য হল দর্শকদের কাছে কোনো নির্দিষ্ট বার্তা বা তথ্যকে আকর্ষণীয় ও কার্যকরভাবে উপস্থাপন করা। Motion Graphics ব্যবহার করে দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করা, তাদের মধ্যে আবেগ জাগানো, এবং তাদেরকে কোনো নির্দিষ্ট কাজের প্রতি আকর্ষিত করাই হচ্ছে Motion Graphics। 


গ্রাফিক ডিজাইন হল রঙ, লাইন এবং বিভিন্ন আকার ব্যবহার করে অডিয়েন্সের কাছে একটি বার্তা বা তথ্য উপস্থাপন করার সৃজনশীল উপায় বা প্রক্রিয়া। বেশিরভাগ সময় এই বার্তাগুলি মার্কেটিং এর সাথে সম্পর্কিত ।


মার্কেটিং বাদেও বিভিন্ন সেক্টর রয়েছে গ্রাফিক ডিজাইনের আওতায়। গার্মেন্টস সেক্টর তার মধ্যে অন্যতম। গার্মেন্টস খাতের যেকোনো পণ্য তৈরি করার আগে এর ডিজাইন করতে হয়। আপনি বিভিন্ন বড়-বড় কোম্পানিতে কাজের সুযোগ পাবেন যদি দক্ষ ডিজাইনার হতে পারেন। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজে ডিজাইনিং এর প্রয়োজন হয়।


Motion Graphics ও গ্রাফিক ডিজাইন এর ইতিহাস  


জন হুইটনি ছিলেন কম্পিউটার-জেনারেটেড মোশন ডিজাইনের পথ-প্রদর্শকদের একজন। 1960 সালে, তিনি তার কোম্পানি, Motion গ্রাফিক্স ইনকর্পোরেটেডের ভিত্তির সাথে "Motion Graphics" শব্দটি তৈরি করেন। টেলিভিশন বিজ্ঞাপন এবং চলচ্চিত্রের শিরোনাম সিকোয়েন্সের জন্য Motion Graphics ডিজাইন করার জন্য তিনি তার নিজস্ব যান্ত্রিক এনালগ কম্পিউটার আবিষ্কার করেছিলেন।


গ্রাফিক ডিজাইনের শেকড় অনেক প্রাচীন হলেও ব্রিটেনে ১৯ শতকের শেষের দিকে ফাইন আর্টস থেকে আলাদা হয়ে গ্রাফিক ডিজাইন স্বতন্ত্র ভাবে আত্মপ্রকাশ করে। এরপর প্রিন্ট মিডিয়ার হাত ধরে আক্ষরিক ভাবে গ্রাফিক ডিজাইন এর পথ চলা শুরু হয় । 

আমেরিকান বই ডিজাইনার, উইলিয়াম এডিসন ডুইজ্ঞিন্স এর হাত ধরে ১৯২২ সালের গোঁড়ার দিকে গ্রাফিক্সের ব্যবহার শুরু হয়েছিলো ।


প্রাচীন গ্রাফিক্স ব্যবহারের হদীস পাওয়া যায় নৃবিজ্ঞানীদের কাছ থেকে। প্রত্নপ্রস্তর যুগে বস্তু চিহ্নিত করার জন্য গুহায়, নুড়ি পাথর, হাতির দাঁত, হাড়, হরিণের শিং দিয়ে তারা প্রচ্ছদ তৈরি করতো । সে সব নকশাগুলোতে জ্যোতির্বিজ্ঞান, বাৎসরিক মৌসুমি ঘটনা, কালক্রমানুযায়ী ঘটনাবলীর প্রতীকী চিত্র খোদাই করা ছিল । তাছাড়াও আজ থেকে প্রায় ৬,০০০ বছর পূর্বে কিছু নকশা এবং চিত্রকর্ম আধুনিকতার প্রদর্শন করে ।


সে সময় মানুষ সিরামিক সিলিন্ডার, পাথরের ট্যাবলেট ইত্যাদিতে মুদ্রাঙ্কন করে রাখতো। পূর্বে, মিশরীয়রা মিশরীয় পিরামিড তৈরি করায় সপেপিরাস নামক এক ধরনের কাগজের মত জিনিস ব্যবহার করত ।


এছাড়াও, চুনাপাথর ও কাঠ ব্যবহারে হদীস পাওয়া যায় । খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ৬০০-২৫০ অব্দে গ্রিক সভ্যতার কাছ থেকে জ্যামিতিক চিত্র কর্মের একটি বিশেষ ভূমিকা দেখা যায় । তারা সেই সময়ে গ্রাফিক্সের মাধ্যমে জ্যামিতিক তত্ত্ব গুলো উপস্থাপন করতো । যেমন, বৃত্তের তত্ত্ব,প্যাথাগোরিয়ান তত্ত্ব। যেমনঃ বৃত্তের তত্ত্ব,প্যাথাগোরিয়ান তত্ত্ব ।


যুগের পর যুগ অতিবাহিত হতে হতে গ্রাফিক ডিজাইনের ধরন এবং কার্যবিধি উন্নত হয়। প্রযুক্তির যুগে এসে গ্রাফিক ডিজাইনের অন্যতম শাখা হিসেবে মোশন গ্রাফিক্স আত্মপ্রকাশ করে।      


মোশন গ্রাফিক্সের প্রকারভেদ 


মোশন গ্রাফিক্স অনেক ধরনের হতে পারে, এবং অনেক ভাবে এটি প্রকাশ করা যেতে পারে:


১. ব্যাখ্যামূলক ভিডিও

২. ইউ আই (UI) অ্যানিমেশন 

৩. ডুডলস

৪. ডায়নামিক লোগো অ্যানিমেশন

৫. ডায়নামিক আইকন

৬. অ্যানিমেটেড হেডলাইন পেজ

৭. অ্যানিমেটেড ইনফোগ্রাফিক্স

৮. প্রেজেন্টেশন ইত্যাদি ।


গ্রাফিক ডিজাইন এর কাজ ও প্রকারভেদ ?


Graphics design কি, এই বিষয়ে ভালো করে জানার পর দ্বিতীয় সব থেকে জরুরি বিষয় যেটা আপনার জানা অবশ্যই দরকার সেটা হলো, গ্রাফিক ডিজাইন এর কাজ গুলো কি-কি সেই বিষয়টি।

কিছু জনপ্রিয় এবং চাহিদা আছে এমন কয়েকটা গ্রাফিক ডিজাইনিং এর কাজ নিচে উল্লেখ করা হলো।


১. ব্র্যান্ড  ডিজাইন   


এখানে, গ্রাফিক ডিজাইনাররা একটি ব্র্যান্ড এবং কোম্পানির হয়ে তাদের লোগো ডিজাইন, লেটারহেড ডিজাইন, ফন্ট এবং টাইপোগ্রাফি নির্দেশিকা নির্বাচন করা থেকে এবং পণ্যের প্যাকেজিং ডিজাইন করার মতো কাজ গুলি করে থাকেন।


২. মার্কেটিং এন্ড এডভার্টাইজিং ডিজাইন 


এই ক্ষেত্রে, একজন গ্রাফিক ডিজাইনার একটি কোম্পানির, পণ্য বা ব্যান্ড এর পক্ষ হয়ে মার্কেটিং এবং এডভার্টাইজিং এর জন্য ডিজাইন করে থাকেন। এটি প্রধানত মার্কেটিং এর জন্য বিভিন্ন রকমের ভিজ্যুয়াল ডিজাইন তৈরি করে। যেমন


১. ইমেইলস 

২. নিউজলেটার্স 

৩. বিলবোর্ডস 

৪. পোস্টার্স  

৫. প্রিন্ট এডস

৬. ওয়েবসাইট  এসেটস



৩. ওয়েবসাইট ইউ আই (UI)  ডিজাইন 


একজন ডিজাইনার নিজ দক্ষতা ব্যবহার করে ওয়েবসাইটের ডিজাইন বা চিত্র অঙ্কন করে ওয়েবসাইট তৈরী করার পরিকল্পনা করে। যেমন ল্যান্ডিং পেজ, প্রোডাক্ট পেজ, প্রোফাইল ম্যানেজমেন্ট ,ডেলিভারি ম্যানেজমেন্ট পেজ, পেমেন্ট মেথড ম্যানেজমেন্ট পেজ সহ একটি ওয়েবসাইট এর ইউআই পেজ ডিজাইনে করে থাকেন I


এক্ষেত্রে একটি ওয়েবসাইট এর যাবতীয় বিষয়  সেই চিত্র বা ডিজাইন অনুসরণ করে ওয়েব ডেভেলপারগণ ওয়েবসাইট তৈরী করে বা ডেভেলপ করে।


৪. ইনফোগ্রাফিক ডিজাইন 


বর্তমান সময়ে একটি Infographic ডিজাইন নানান জায়গাতেই ব্যবহার করা হয়। যেমন ধরুন, একটি ওয়েবসাইটে, ম্যাগাজিনে, চার্টস এবং বই ইত্যাদিতে। এক্ষেত্রে একটি আকর্ষণীয় ইনফোগ্রাফিক তৈরি করার ক্ষেত্রেও কিন্তু গ্রাফিক ডিজাইনারের প্রয়োজন।


৫. টেক্সটাইল / সারফেস ডিজাইন 


টেক্সটাইল গ্রাফিক ডিজাইনাররা নানান বড়-বড় প্রজেক্টস এর ক্ষেত্রে কাজ করে থাকেন। যেমন ধরুন- ফেব্রিক ডিজাইনিং, ওয়ালপেপার ডিজাইন, কার্পেট এবং ফার্নিচার ডিজাইন করা ইত্যাদি।


৬. এডিটোরিয়াল  ডিজাইন 


একজন গ্রাফিক ডিজাইনার একটি প্রকাশনার ডিজাইন করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন ধরুন, বই, ম্যাগাজিন, ই-মেইল, খবরের কাগজ, ডিজিটাল প্রকাশনা ইত্যাদির ক্ষেত্রে একজন এডিটোরিয়াল গ্রাফিক ডিজাইনার প্রকাশনার টোন সেট করতে সাহায্য করে।


মোশন গ্রাফিক্স কিভাবে কাজ করে? 


চলুন এই  সম্পর্কে আজকে আপনাদের কিছু একটা ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করবো


১। মোশনকে ভিজ্যুয়াল এইড (Visual Aid ) ও বলা হয়.  ভিজ্যুয়ালাইজ করা যায় এমন কিছু তাদের উপলব্ধির চেয়ে বেশি মনে রাখতে পারে। ভিজ্যুয়াল এইড এর মাধ্যমে আইডিয়া বা কনসেপ্ট সম্পর্কে খুব পরিষ্কার ধারণা দেওয়া সম্ভব, তা যত জটিলই হোক না কেন। এটি যেন অডিয়েন্সরা খুব সহজে বুঝতে পারে এবং উপলব্ধি  করা তাদের জন্য সহজ হয়I 


২।  যখন কোনো মাঝারি বা ছোটখাটো দৃশ্য তৈরি করার দরকার হয় ঠিক তখন ভিজ্যুয়াল এইড ব্যবহার করা হয়। এছাড়া আউটলাইন তৈরি করা বা কোনো ফ্যাক্ট বোঝানোর জন্য ভিজ্যুয়াল এইডের ব্যাবহার সবচেয়ে ভালো ব্যাবহার হয়ে থাকে। 


৩। গতি গ্রাফিক্সের সহজ ব্যাবহার নিশ্চিত করে যে এটি ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে।  সেখানে আপনি ভিজ্যুয়াল এইডের সাহায্যে খুব সহজ এবং আকর্ষণীয় জিনিসগুলি সহজেই প্রকাশ করতে পারেন।


মোশন গ্রাফিক্স শিখার জন্য প্রি রিকোয়ারমেন্ট


কমপ্যাটিবল পিসি বা ল্যাপটপ


মোশন গ্রাফিক্স শিখার জন্য সর্বনিম্ন ৮ জিবি এবং সর্বোচ্চ ১২ জিবি হওয়া উচিতI পিসি'র অন্যান্য হার্ডওয়্যার এর মধ্যে মনিটর এবং সি.পি.উ উল্লেখযোগ্য ডিজাইন নিয়ে কাজ করার জন্য উপযুক্ত ।

এক্ষেত্রে যদি আপনার বাজেত এর সল্পতা থাকে সেক্ষেত্রে আপনি ৮ জিবি দিয়ে শুরু করতে পারেন I


সফটওয়্যার


গ্রাফিক্স রিলেটেড যে কোন কাজের জন্যই ডিজাইন/এডিট করার সফটওয়্যার এর প্রয়োজন হয়। এই প্রোগ্রামগুলোতে অনেক ফাংশনালিটি থাকার কারনে এগুলো সাধারনত হেভি মেমোরি প্রয়োজন হয়।


১.  Adobe After Effect


২.  Adobe Photoshop


৩.  Adobe Illustrator

৪.  Blenders etc.


গ্রাফিক ডিজাইন নলেজ


গ্রাফিক ডিজাইন নলেজ এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত যেমন শেইপ ,কালার ,ইমেজ ,কনটেন্ট ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আপনার নলেজ থাকতে হবে। কেননা ডিজাইন থিওরি আপনার মোশন গ্রাফিক্স এর কাজকে সহজ করে তুলবে।



ক্রিয়েটিভিটি এবং অনুশীলন


আপনার ডিজাইন সেন্সকে আরো ইউনিক করে তুলতে প্র্যাকটিসের বিকল্প কিছু নেই। বেশি বেশি ডিজাইন করা ও ব্রেইন স্ট্রমিং করার মাধ্যমে আপনি ইউনিক ডিজাইনের আইডিয়া জেনারেট করতে পারবেন। 


আশা করি আজকের এই আলোচনা থেকে আপনারা মোটামুটি কিছুটা হলেও ধারনা নিতে পেরেছেনI বর্তমান যুগে মোশন Graphics যতটা চাহিদাসম্পূন্ন র্কাজ তেমন গুরুত্বপূর্ণ ও বটে । আপনি যদি মোশন গ্রাফিক্স এক্সপার্ট হতে চান তাহলে অব্যশই গ্রাফিক ডিজাইন আগে আয়ত্ত করতে হবে, এরপর আপনাকে যেতে হবে Motion Graphics এর দিকে I কারণ আপনি গ্রাফিক ডিজাইন ছাড়া, কখনোই একজন  Motion গ্রাফিক্স এক্সপার্ট হতে পারবেন নাI তাই গ্রাফিক ডিজাইনকে সঙ্গী করে একজন এক্সপার্ট Motion গ্রাফিক ডিজাইনার হবার জন্য যাত্রা শুরু করুন।

Comments (0)

Share

Share this post with others

অনলাইন কোর্সে ১০০% স্কলারশিপের সুযোগ

অনলাইন কোর্সে ১০০% স্কলারশিপের সুযোগ

আসন সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ইউ ওয়াই ল্যাবের সকল অনলাইন কোর্সে পাবেন ১০০% স্কলারশিপ! আসন নিশ্চিত করতে রেজিঃ করুন এখনই।