অনলাইন বিজনেস শুরু করার প্রপার গাইডলাইন

Created by UY LAB in Digital Marketing 10 Mar 2024
Share

তথ্য প্রযুক্তির যুগে আমাদের জীবন সহজ হয়েছে এবং অনেক বাধা দূর হয়েছে। ইন্টারনেট, পৃথিবীকে নিয়ে এসেছে এখন হাতের মুঠোয়। বিনোদনের পাশাপাশি ইন্টারনেট এখন অনেক মানুষের আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে উঠেছে। আপনি ঘরে বসেই আপনার ব্যবসায় শুরু করতে পারেন এবং আপনার গ্রাহক হতে পারে পুরো পৃথিবীর যে-কোন প্রান্তের যে-কোন মানুষ।


একটি বিজনেস শুরু করার আগে, আপনাকে সেই বিজনেস সম্পর্কে স্টাডি করতে হবে এবং যেহেতু অনলাইন বিজনেস ভার্চুয়াল, তাই আপনাকে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। একটি অনলাইন ব্যবসায় শুরু করার আগে, আপনার অবশ্যই একটি ভিশন থাকতে হবে, যাকে "মাইন্ড-সেট" বলা হয়। তাই আগে আপনার ভিশন ঠিক করুন। একটি অনলাইন ব্যবসায়কে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লাভজনক করতে প্রয়োজনীয় স্টেপ গুলি সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন, এরপর শুরু করুন৷ 


অনলাইন বিজনেস শুরু করা খুব কঠিন কিছু নয়, আবার একেবারে সহজ এমনটাও নয়। ব্যবসায় শুরু করার আগে আপনাকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যবসায়র জন্য প্ল্যান এবং স্ট্র্যাটেজি তৈরি করার মতো সূক্ষ্ম কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি প্রায়ই নতুন উদ্যোক্তারা উপেক্ষা করে থাকেন। যার ফলে ব্যবসায় শুরুর পরে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল দেখা যায় না, কিংবা টিকে থাকাটাই হয়ে উঠে মুশকিল। 


আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে অনলাইন বিজনেসের সকল খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানাবো। অনলাইন ব্যবসায় কী? কীভাবে করে? কী কী পদক্ষেপ ফলো করলে অনলাইন ব্যবসায়য় বেশি বেশি সাফল্য অর্জন করা যায় তার সবকিছু। 


চলুন তাহলে অনলাইন ব্যবসায় কি তা থেকেই শুরু করা যাক -


অনলাইন বিজনেস কী ?


একটি অনলাইন বিজনেস হলো এমন এক ধরনের ব্যবসায় যা, অনলাইনে বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পরিচালিত হয়। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে মানুষ স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইন ব্যবসায় করছে। প্রতিদিন ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে অনলাইন ব্যবসায়ের সুযোগও বাড়ছে। গ্রাহকরা সহজেই ল্যাপটপ, কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইনে যে-কোনো পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করে থাকেন। যা অনলাইন বিজনেস নামে পরিচিত।


অনলাইন ব্যবসায়ের পরিসংখ্যান


অনলাইন কেনাকাটার প্রতি মানুষের আগ্রহ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ব্যাংকের কার্ডধারীদের মধ্যে এই প্রবণতা খুবই বেশি। গত অর্থ বছরের প্রথম ১১ মাসে, ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে ই-কমার্স খাতে লেনদেনের মূল্য ১৩ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা বেশি লেনদেন হয়েছে। আগের অর্থবছরে লেনদেনের মূল্য ছিল ৯ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 


গত বছরের জুলাই মাসে, ই-কমার্সে কার্ডের মাধ্যমে রেকর্ড ১৩৯২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। গ্রাহকরা এর আগে কোনো অনলাইন স্টোরে এত বেশি লেনদেন করেননি। ই-ক্যাব (E-cab) কর্মকর্তারা মনে করেন, সরকারের পাস করা বিভিন্ন আইনের কারণে এ খাতের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে এসেছে। এই কারণে, মানুষ ক্রমবর্ধমান অনলাইন কেনাকাটা করছেন। এতে বুঝায় যাচ্ছে অনলাইন ব্যবসায় ধীরে ধীরে পুরো পৃথিবী গ্রাস করে ফেলছে।


অনলাইন ও অফলাইন ব্যবসায়ের পার্থক্য


ইন্টারনেট ব্যবসায় বলতে এমন ব্যবসায়কে বোঝায় যা, অনলাইনে বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পরিচালিত হয়। অন্য কথায়, এই ব্যবসায়ে ইন্টারনেটে অ্যাকটিভ থাকা কাস্টমার বা গ্রাহকদের টার্গেট করে পণ্য (product), সার্ভিস (service) বা যেকোনো জিনিস অনলাইনেই বিক্রি করা হয়। 


অনেক সময় বলা যেতে পারে যে, অনলাইন ব্যবসায় কেবল ক্রয় এবং বিক্রয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি গুগল অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে আপনার ব্লগ, ওয়েবসাইট বা ভিডিওতে অ্যাডভারটাইজিং দিয়ে অনলাইনে অর্থ উপার্জন করেন তবে, এটি এক ধরনের প্রফিটেবল অনলাইন ব্যবসায়।


অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে কমিশন আয় করাও অনলাইন ব্যবসায়ের একটি মাধ্যম। আরও অনেক ধরনের অনলাইন বিজনেস রয়েছে যেগুলিতে সরাসরি ক্রয়-বিক্রয় জড়িত না থাকলেও, সেগুলোকেও ব্যবসায়র একটি অংশ হিসেবেই ধরা হয়।


আরো সহজ ভাষায় বললে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবসায়ের কিছু অংশ বা পুরো ব্যবসায় পরিচালনা করা হলে, তাকে অনলাইন ব্যবসায় বলা হয়। একটি অনলাইন ব্যবসায় শুরু করা মানে হতে পারে একটি অনলাইন স্টোর, ব্লগ, ইউটিউব, অনলাইন শপিং বা অন্য কোনো অনলাইন সার্ভিস প্রদান করা। 


আমাদের যেমন অফলাইনে ব্যবসায় করার অনেক নিয়ম ও উপায় রয়েছে, তেমনি অনলাইনে ব্যবসায় করার অনেক নিয়ম ও উপায় রয়েছে। তবে অনলাইন ব্যবসায় এবং অফলাইন ব্যবসায়ের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করলে দেখা যায়, অনলাইন ব্যবসায়র সুবিধা অনেক গুণ বেশি। নিচে অনলাইন এবং অফলাইন বিজনেসের পার্থক্যগুলো তুলে ধরা হলো -


. অনলাইন ব্যবসায়ের জন্য আপনার কোনো ফিজিক্যাল অফিস বা স্টোরের প্রয়োজন নেই। আপনার ব্যবসায় শুরু করার জন্য আপনার যা থাকা দরকার তা হলো - একটি ইন্টারনেট সংযোগ সহ একটি ল্যাপটপ বা কম্পিউটার৷ এছাড়াও আরেকটি সুবিধা হলো, এই বিজনেস ঘরে বসেও করা যায়।


কিন্তু, অফলাইন ব্যবসায়র জন্য, আপনার একটি ফিজিক্যাল স্টোর বা অফিস প্রয়োজন। অন্যথায়, গ্রাহক আপনার পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট হবে না।


. অনেক ধরনের অনলাইন ব্যবসায় আছে যেগুলো আপনি তুলনামূলক কম মূলধন দিয়ে শুরু করতে পারেন এবং কিছু ক্ষেত্রে, আপনি টাকা ছাড়াও একটি ব্যবসায় শুরু করতে পারেন। কিন্তু আজকাল অল্প বা বিনা ইনভেস্টে একটি অফলাইন ব্যবসায় শুরু করা প্রায় অসম্ভব।


. একটি অনলাইন ব্যবসায়েরা বড় একটি সুবিধা এই যে, গ্রাহক এবং অডিয়েন্স আপনার অনলাইন শপ, ওয়েবসাইট বা ব্লগে যেকোনো সময় এবং তাদের নিজের ঘরে বসেই অ্যাক্সেস করতে পারবেন।


আপনার ব্যবসায় জনসাধারণের জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। এতে আপনার ব্যবসায় এবং মুনাফা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।


কিন্তু, অফলাইন স্টোরগুলির জন্য গ্রাহকদের প্রতিবার ফিজিক্যাল স্টোরে ভিজিট করে প্রোডাক্ট কিনতে হয়৷ তাছাড়া, আমরা আমাদের দোকানগুলি ২৪ ঘন্টা খোলা রাখতে সক্ষম নাও হতে পারি এবং বিভিন্ন কারণে আমাদের ফিজিক্যাল স্টোরগুলি বন্ধ রাখতে বাধ্য হতে পারি৷ এতে কাস্টমার হারানোর একটা পসিবিলিটি থাকে। 


এতে বলাই যায়, অফলাইন স্টোরের চেয়ে অনলাইন স্টোরগুলিতে অর্থ উপার্জনের আরও বেশি সুযোগ রয়েছে।


. আপনি বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে আপনার অনলাইন ব্যবসায় চালাতে পারেন। আপনার কেবল একটি ল্যাপটপ এবং ইন্টারনেট সংযোগ প্রয়োজন হবে।


কিন্তু, একটি নির্দিষ্ট জায়গা ছাড়া, কোন অফলাইন ব্যবসায় সম্ভব নয়। আপনাকে এক জায়গা থেকে আপনার ব্যবসায় পরিচালনা করতে হবে।


. অফলাইন স্টোর এবং ব্যবসায়গুলি আপনাকে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গ্রাহকদের কাছে পণ্য বিক্রি করার অনুমতি দেয়।


কিন্তু, একটি অনলাইন ব্যবসায়র মাধ্যমে, আপনি সারা দেশে এবং বিদেশের মানুষ এবং গ্রাহকদের উপর ফোকাস করে, দেশে এবং বিদেশে ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারেন। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারাদেশ থেকে গ্রাহকরা আসেন। তবে, আপনার ব্যবসায় শুরু করার আগে বিজনেসের মার্কেটিং করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


৬. অনলাইন বিজনেসে তুলনামূলক কম খরচে প্রোডাক্ট কিনতে পারা যায়, তার বড় কারণ হলো অনলাইন বিজনেসের কোনো ফিজিক্যাল স্টোরের প্রয়োজন হয় না, তাই দোকান ভাড়া, কারেন্ট বিলসহ আরো অনেক ধরণের খরচ থেকে তারা মুক্ত থাকতে পারে। ফলে অফলাইন বিজনেসের থেকে কম দামে প্রোডাক্ট সেল করতে পারে। 


অনলাইন বিজনেস শুরু করার সেরা গাইডলাইন


ব্যবসায় নিয়ে তো অনেক কথা হলো, চলুন তাহলে বিজনেস শুরু করার জন্য যে-সব প্রপার গাইডলাইন আছে, সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। কেননা ব্যবসায় শুরু করলেই হবে না, প্রপার গাইডলাইন মেনে বিজনেস শুরু না করলে ঐ বিজনেস থেকে আপনার আশানুরূপ ফল পাওয়ার সম্ভাবনা দিন দিন কমতেই থাকবে। নিচে বিজনেসের প্রপার গাইডলাইন নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা হলো - 


পণ্য/সার্ভিস


প্রথমত, আপনি কোন পণ্য বা সার্ভিস দিয়ে ব্যবসায় শুরু করতে চান তা নির্ধারণ করুন। অগণিত উদ্যোক্তা আছেন, যারা অনলাইনে বিভিন্ন পণ্য বা সেবা বিক্রি করে থাকেন। অন্য কাউকে দেখার বা অনুকরণ করার পরিবর্তে আপনি বিশ্বাস করেন এবং আপনার সেইসব পণ্য সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে, এমন পণ্যগুলি নিয়ে কাজ শুরু করুন। আপনার পণ্য আপনি, আপনার পরিবার বা বন্ধুদের দ্বারা ব্যবহার করানো যাবে কিনা তা বিবেচনা করুন। এই সাধারণ চিন্তা ও কাজ আপনাকে আত্মবিশ্বাস দেবে এবং আপনি নিজে বুঝতে পারবেন সঠিক পণ্য নিয়েই আগাচ্ছেন কি-না।


মার্কেট অ্যানালাইসিস


কি নিয়ে বিজনেস করবেন তা নির্ধারণ করার সময়, পণ্যটির চাহিদা বিবেচনা করুন। কে এটি কিনবে এবং কতবার কিনবে। দেখা গেল, আপনি এমন একটি পণ্যে সিলেক্ট করছেন যার চাহিদা নেই, অথবা আপনি পণ্যটি এমন লোকেদের কাছে বিক্রি না করে যাদের এটির প্রতি কোন চাহিদা নেই, তাদের কাছে সেল করতে চাচ্ছেন। এই ক্ষেত্রে, আপনার ব্যবসায় আশানুরূপ বৃদ্ধি পাবে না, বরং ব্যর্থ হতে পারে। তাই মার্কেট ভালো করে বুঝে নিন। আপনার টার্গেট গ্রাহকদের নিয়ে রিসার্চ করুন, সার্ভে পরিচালনা করুন, আপনার কম্পিটিটররা কী করছেন তা পরীক্ষা করুন, আপনার গ্রাহকরা কী বলে এবং তারা আপনার বিজনেস বা সার্ভিস থেকে কী আশা করে তা সাবধানতার সাথে অ্যানালাইসিস করুন । কোনো ভুল থাকলে ভুল থেকে শিখুন, এবং পরবর্তীতে সে অনুযায়ী কাজ করুন।


বিজনেস প্ল্যান


উদ্যোক্তাদের সবচেয়ে বেশি যে সাধারণ ভুলটি হয়, তা হলো - একটি সঠিক বিজনেস প্ল্যান না থাকা। একটি টেমপ্লেট বা নোট ব্যবহার করে সমগ্র ব্যবসায়ের পরিকল্পনা লিখুন, শুধুমাত্র মুখে মুখে কিংবা ধারণা করে নয়। তাহলে আপনি নিজে থেকেই বুঝতে পারবেন কোথায় কোথায় আপনার ব্যবসায়ের দূর্বলতা রয়েছে।


মূলত, একটি বিজনেস প্ল্যান আপনার আইডিয়াকে এমনভাবে সাজিয়ে তুলবে যাতে, আপনি বুঝতে পারেন আপনার স্ট্র্যাটেজি কেমন হওয়া উচিত, আপনার একটা নির্দিষ্ট টার্গেটে পৌঁছাতে পুরো ওয়ার্ক প্রসেস কেমন হতে হবে। অনেক ভালো বিজনেস আইডিয়া ফেইল করতে পারে শুধুমাত্র সু-গঠিত প্রসেস কিংবা স্ট্র্যাটেজি না থাকার কারণে।  একটি ভাল ব্যবসায়য়িক পরিকল্পনা আপনাকে বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে, নিশ্চিত করবে যে আপনি মাঝপথে হারিয়ে যাবেন না, আপনাকে আপনার ব্যবসায় সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বোঝার সুযোগ দেবে এবং আপনাকে আপনার বিজনেসে ফোকাসড থাকতে সাহায্য করবে।


প্রয়োজনীয় লিগ্যাল ডকুমেন্ট


আপনার ব্যবসায় শুরু করার জন্য আপনার যদি কোনো পারমিট বা আইনি নথির প্রয়োজন হয়, তা অবশ্যই সম্পন্ন করুন। আপনার যদি কোনো কোম্পানির আইডি কার্ড, ব্যবসায়য়িক লাইসেন্স, টিআইএন বা আপনার পণ্যের জন্য বিশেষ নথি থাকে, তাহলে অনলাইনে বা নিজে সার্চ করে কনফার্ম হয়ে নিন। অনুগ্রহ করে আপনার ব্যবসায় শুরু করার পরে জটিলতা এড়াতে চেষ্টা করুন। যাতে আপনি আপনার ব্যবসায়ে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারেন।


ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া 


অফলাইন ব্যবসায়ে আমরা দোকানে বা শো-রুমে কাস্টমারদের কাছে যেভাবে পণ্য বিক্রি করি, ঠিক তেমনি আমরা ওয়েবসাইট বা সোশ্যাল মিডিয়া পেজের মাধ্যমেও অনলাইন কাস্টমারদের কাছে পণ্য বিক্রি করতে পারি। একটি ওয়েবসাইট হলো - আপনার ব্যবসায়ের ডিজিটাল স্টোর। একটি ওয়েবসাইট আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াবে কারণ ক্লায়েন্টরা আপনাকে স্মার্ট ভাববে। অনলাইন ব্যবসায় বিশ্বাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।


কিন্তু আপনি যদি একটি ব্যবসায় শুরু করেন, তাহলে কি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে আপনার ৪০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা খরচ করতে হবে? এই কনসেপ্ট মোটেও ঠিক না। আজকাল, এমন অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে যেগুলো দিয়ে নিজেই ই-কমার্স ওয়েবসাইট সেটাপ করে নেয়া যায় বাহিরের কোনো ডেভেলপারের সহযোগিতা ছাড়াই। উদাহরণস্বরূপ, মার্চেন্ট ব্যবহার করে মাত্র ৫ মিনিটে আপনার নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরি করুন। অর্ডার ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে পেমেন্ট, ডেলিভারি এবং ই-কমার্স সব ফিচারই পাবেন এখানে। আপনি মোবাইল অ্যাপ থেকে ওয়েব ড্যাশবোর্ড পর্যন্ত যেকোনো জায়গা থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। 


এছাড়াও, ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক মিডিয়াগুলোতে পেইজ খুলুন। ওয়েবসাইটটি পেইজে যোগ করুন। পেইজে কন্টেন্ট দিয়ে নিয়মিত অ্যাকটিভ থাকুন এবং কাস্টমারের মেসেজ এবং কমেন্টের রেসপন্স করুন। Facebook গ্রুপ ব্যবহার করে আপনার ব্যবসায়ের জন্য একটি কমিউনিটি তৈরি করুন। এতে আপনার কাস্টমাররা নিজেদের মতামত আরো সহজে দিতে পারবে এর সাথে সাথে আপনার আপডেট আরো দ্রুত পাবে। একটি কমিউনিটির মাধ্যমে একটি ব্র্যান্ড তৈরি করা এবং একটি বিশ্বস্ত কাস্টমার-বেইজ তৈরি করা খুবই ইফেক্টিভ হতে পারে আপনার ব্যবসায়র জন্য।


তবে শুধু ফেসবুকেই পণ্য বিক্রি করবেন না, এফ-কমার্স থেকে ই-কমার্সে রূপান্তরের কথা সবসময় মাথায় রাখতে হবে। অন্যথায়, আপনি কাস্টমারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ডেটা হারাবেন যা, আপনার ব্যবসায়র বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে।


মার্কেটিং এবং সেলস


ব্যবসায় শুরু করেছেন এখন তো সেলস দরকার। সেলস আনতে মার্কেটিং শুরু করুন। মার্কেটিং মানেই কেবল পোস্ট বুস্ট বা ক্যাম্পেইন করা নয়। মার্কেটিংয়ের জন্য সঠিক প্রসেস ফলো করুন, এক্ষেত্রে সঠিক মার্কেটিং ফানেল অনুসরণ করে সেলস জেনারেট করুন। আপনার পণ্য ব্যবহার করবে এমন একটি আদর্শ মানুষের প্রোফাইল বানান, যাকে Ideal Customer Profile (ICP) বলে। আপনার সব মার্কেটিং প্ল্যান এই আইসিপির মানুষের সাথে কতটুক যৌক্তিক বিবেচনা করে সাজান। ওয়েবসাইটে এই আইসিপি থেকে ভিজিটর আনুন, ভিজিটরদের রি-টার্গেটিং করুন। সোশ্যাল মিডিয়াতে এনগেইজিং পোস্ট করুন, নিজের ব্র্যান্ডকে পরিচিত করে তুলুন। ভাইরালিটির উপর জোর দিন, এতে পেইড প্রমোশনের চাইতে কথার মাধ্যমে মার্কেটিং (ওয়ার্ড অফ মাউথ) বেশি হবে এবং এর মাধ্যমে খুব সহজে অর্গানিকালি বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবেন। 



অনলাইন বিজনেসের প্রপার গাইডলাইন মেনে যদি আপনার বিজনেস শুরু করেন, তাহলে আপনি আস্তে আস্তে নিজেকে মেলে ধরতে পারবেন এই সেক্টরে। তবে আপনাকে এটাও মনে রাখতে হবে যে, অনলাইনকে কেন্দ্র করে হাজারো ব্যবসায় গড়ে উঠেছে। আপনি যদি আপনার স্টেপগুলো ঠিক-ঠাক ভাবে পালন না করতে পারেন, তাহলে আপনি এই অনলাইন সেক্টরে বেশিদিন সার্ভাইভ করতে পারবেন না। 


সাপ্লাই চেইন ও ডিস্ট্রিবিউশন


পণ্য কোথা থেকে এবং কীভাবে কালেক্ট করবেন তা আগে থেকেই ঠিক করে নিন। চেষ্টা করুন সোর্সিং বা কালেক্ট করার প্রসেসটা যেন স্মুথ এবং যথাসম্ভব অল্প খরচে করা যায়। এতে প্রোডাক্টে আপনার প্রফিট মার্জিন বাড়বে। আপনার যদি শুধুমাত্র একটি পণ্যের উৎস থাকে, তাহলে ব্যাকআপ হিসেবে আরও দুই বা তিনটি উৎস যোগ করুন। তবে এই ক্ষেত্রেও, আপনার পণ্যের কোয়ালিটির সাথে আপস করা উচিত নয়। সবসময় হাতে এক্সট্রা অপশন রাখুন যাতে আপনার কাস্টমাররা খালি হাতে ফেরত না যান।


আপনি যখন নিজেই একটি পণ্য ম্যানুফেকচার করেন, তখন আপনি নিজে আগে সিদ্ধান্ত নেন যে, আপনি কতটা ম্যানুফেকচার করতে পারেন এবং কীভাবে এটি ম্যানুফেকচারিং প্লেস থেকে কাস্টমারের কাছে পৌঁছাবেন। অনলাইন ব্যবসায়ের লজিস্টিক বা ডিস্ট্রিবিউশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেকারি পণ্যের ডিস্ট্রিবিউশন প্রসেস কখনোই ফ্যাশন পণ্যের ডিস্ট্রিবিউশনের মত হবে না। সঠিক পণ্যের জন্য সঠিক বিক্রয় প্রক্রিয়া সেট আপ করুন। অন্যথায়, কাস্টমার স্যাটিসফেকশন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। খুব ভালো প্রোডাক্ট, খুব সুন্দর বিজনেস প্ল্যান থাকার পরেও ব্যবসায় ফেইল করতে পারে যদি একটি স্ট্রং সাপ্লাই চেইন এবং ডিস্ট্রিবিউশন নিশ্চিত করতে না পারেন। কারন গ্রাহকরা যেমন আপনার থেকে ভালো প্রোডাক্ট চায়, ঠিক তেমনই চায় যাতে আপনার পন্যটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তার কাছে পৌঁছাক। তাই অনুগ্রহ করে সাপ্লাই চেইন ও ডিস্ট্রিবিউশনের বিষয়গুলিতে মনোযোগ দিন।



প্রথমে আপনি একজন কাস্টমারকে আগে টার্গেট করুন, এরপরে ১০ (দশ) জন, এরপরে ১০০ (একশ) জন এভাবে টার্গেট সেট করে সেলস স্ট্র্যাটেজি বা কৌশল ঠিক করুন এবং সে অনুসারে মার্কেটিং করুন। ধৈর্য ধরে ব্যবসায় এগিয়ে নিন। রাতারাতি সাফল্য আসবে না, টার্গেট ধরে ধরে আগাতে হবে। সবসময় নতুন ট্রেন্ড কিংবা নতুন নিয়মের সাথে আপডেটেড থাকার চেষ্টা করুন। কাস্টমারের কথা শুনুন, তাদের মতামতের গুরুত্ব দিন। ব্যবসায়ে কাস্টমারই আপনার সব। তাদেরকে প্রাধান্য দিয়ে যদি আপনি আপনার ব্যবসায়ে ভিন্নতা আনতে পারেন, তাহলে সহজেই আপনি একটা শক্তিশালী ফ্যান-বেইজ বা কাস্টমার-বেইজ তৈরি করতে পারবেন, যা আপনার ব্যবসায়ের সেলস রানিং রাখতে পারবেন এবং নিজের ব্যবসায়কে অন্য লেভেলে নিয়ে যেতে পারবেন।

Comments (0)

Share

Share this post with others

অনলাইন কোর্সে ১০০% স্কলারশিপের সুযোগ

অনলাইন কোর্সে ১০০% স্কলারশিপের সুযোগ

আসন সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ইউ ওয়াই ল্যাবের সকল অনলাইন কোর্সে পাবেন ১০০% স্কলারশিপ! আসন নিশ্চিত করতে রেজিঃ করুন এখনই।